প্রশ্নের মুখে পড়শি দেশের বিচারব্যবস্থা! “ক্যাঙ্গারু কোর্ট হিসেবে বিবেচিত ICT বাংলাদেশ, শুরু নতুন বিতর্ক

Published on:

Published on:

Bangladesh judicial system under question.

বাংলা হান্ট ডেস্ক: এবার বাংলাদেশের (Bangladesh) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তথা ICT-BD-কে “ক্যাঙ্গারু কোর্ট” ও “রাজনৈতিক নিপীড়নের হাতিয়ার” হিসেবে আখ্যায়িত করলেন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার লন্ডনের ফ্রন্টলাইন ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এহেন প্রতিক্রিয়া দেন ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সিনিয়র কোর্টের সলিসিটর তথা আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ সায়েদ জয়নাল আবেদিন। জানিয়ে রাখি যে, ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও বিচার ব্যবস্থার পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিস্তারিত আইনি বিশ্লেষণমূলক রিপোর্ট প্রকাশ করেন।

প্রশ্নের মুখে বাংলাদেশের (Bangladesh) বিচারব্যবস্থা:

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে (Bangladesh) ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিমালা লঙ্ঘন করছে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করার মাধ্যমে বিচার ও প্রশাসনিক কাঠামোকে “রাজনৈতিক স্বার্থের যন্ত্রে” পরিণত করেছে। এছাড়াও, রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শেখ হাসিনার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী। এমতাবস্থায়, ২০২৪ সালের জুলাই-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে প্রশাসনিকভাবে গঠিত ইউনূস সরকারকে “দখলদার প্রশাসন (de facto regime)” হিসেবেও বিবেচনা করা হয়েছে।

Bangladesh judicial system under question.

ওই রিপোর্টে আন্তর্জাতিক আদালতের Namibia Advisory Opinion (ICJ, 1971)-এর উদাহরণকে সামনে এনে বলা হয়েছে, কোনও অবৈধ সরকারের অধীনে গৃহীত প্রশাসনিক কার্যক্রম আইনগতভাবে শূন্য ও অকার্যকর। উল্লেখ্য যে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের (Bangladesh) রাষ্ট্রপতির একটি আদেশের মাধ্যমে ICT আইনকে অতীতমুখীভাবে সম্প্রসারণ করা হয়। যা ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সংঘটিত অপরাধগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি সংবিধানের ৩৫(১) অনুচ্ছেদ ও ৯৩ অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন। এই সংশোধনকে প্রতিবেদনে আইনি ভাষায় “ultra vires” বা “বিধিবহির্ভূত” কর্ম বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

Bangladesh judicial system under question.

ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের আইনজীবী বেছে নেওয়ার অধিকার হরণ থেকে শুরু করে পক্ষপাতদুষ্ট প্রসিকিউটর নিয়োগ এবং একপাক্ষিক শুনানির মতো উদাহরণগুলি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, বিশেষত ICCPR-এর ১৪(৩)(d) ধারা লঙ্ঘন করে। নতুন নির্দেশে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন বা তদন্তাধীন ব্যক্তিরা সরকারি পদে থাকতে পারবেন না বা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। রিপোর্টে এই বিধানকে “দোষী প্রমাণের আগেই দোষ স্বীকারের পূর্বধারণা (presumption of guilt before trial)” হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে। যেটি আধুনিক বিচারব্যবস্থার জন্য অগ্রহণযোগ্য।

Bangladesh judicial system under question.

রিপোর্টে সতর্কতার মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, ২০২৪ সালের অগাস্ট মাসের থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৪ লক্ষাধিক ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা ন্যায্য বিচার ছাড়া আটক হয়েছেন। বাংলাদেশের (Bangladesh) কারাগারগুলি বর্তমানে ধারণক্ষমতার ৩ গুণ বেশি বন্দিতে পূর্ণ রয়েছে এবং বহু ক্ষেত্রে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এহেন কর্মকাণ্ড Rome Statute (1998) অনুযায়ী মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ (Crimes against Humanity) হিসেবে গণ্য হতে পারে।

আরও পড়ুন: বাঁশের ঝুড়ি বুনে চলত সংসার, নিজের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে UPSC জয় শিবগুরুর

সংবাদ সম্মেলনে সায়েদ জয়নাল আবেদিন বলেন, “ড. ইউনূসের প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনও বৈধ আদালত নয়। বরং, এটি রাজনৈতিক অস্ত্র।” তিনি আরও জানান, “বাংলাদেশের জনগণের এমন একটি বিচারব্যবস্থা প্রাপ্য, যা আইন, স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক ন্যায়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।” পাশাপাশি, তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের “নীরবতা”-কে উদ্বেগজনক হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “এখন সময় এসেছে সংবিধান ও আইনের শাসনের পক্ষে আন্তর্জাতিক কণ্ঠস্বর জোরদার করার।”

আরও পড়ুন: “বেচাল দেখলেই যোগ্য জবাব দেওয়া হবে”, পাকিস্তানকে সরাসরি ‘অ্যাক্ট অব ওয়ার’- এর হুঁশিয়ারি ভারতের

জানিয়ে রাখি যে, ওই সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই-এর অদিতি খান্না থেকে শুরু করে সিএনএন নিউজ১৮-এর সনজয় উর সুরী, চ্যানেল এস-এর রেজাউল করিম মৃধা সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টেলিভিশন সাংবাদিক তামান্না মিয়া। যিনি বলেন, “এই রিপোর্ট শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার গণতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা।” তবে, বাংলাদেশ (Bangladesh) সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।