সমাধান হল ‘ভূতুড়ে স্টেশন বেগুনকোদর’-এর রহস্যের! ৫৬ বছর পর প্রকাশ্যে এল ইতিহাসের সেই হলদেটে পাতা

বাংলাহান্ট ডেস্ক : বেগুনকোদর (Begun Kodar)! নামটা শুনলেই ছমছম করে ওঠে গা। মনের ভিতর শুরু হয়ে যায় যেন এক অশরীরি উত্তেজনা। এতদিন পর জট খুলল বেগুনকোদর রহস্যের! বছর পাঁচেক আগে প্রশাসন, পুলিস, রেল ও বিজ্ঞান মঞ্চ রাত জেগে প্রমাণ করেছিল বেগুনকোদরে আর যাই থাক ভূত একেবারেই নেই। সেই সঙ্গে ভূতের অস্তিত্ব প্রমাণে আবার ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের পুরুলিয়া জেলা শাখা। এখন প্রশ্ন হল এই ‘ভূত-ভূত’ উত্তেজনাটা তৈরি হল কীভাবে? পাঁচ দশকের বেশি অর্থাৎ ৫৬ বছর পর ঠিক ভূত চতুর্দশীর আগে সেই ভূত রহস্যের সমাধান করলেন ওই এলাকারই এক বৃদ্ধ।

এই স্টেশনের যে স্টেশন মাস্টার নাকি ভূত দেখেছিলেন! তা পুরোটাই একটা রটনা। ওই স্টেশন মাস্টারের চার মেয়ে এলাকায় চরম ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ায় বদলি নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে এই ভূতের গল্প বানিয়েছিলেন। ভূত চতুর্দশীর আগে সেই ভূতুড়ে স্টেশন বেগুনকোদরের (Begun kodar) সামনে দাঁড়িয়ে ৫৬ বছরের সেই ভুতুড়ে রহস্য ফাঁস করে দিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা ৭১ বছর বয়সী অঙ্গদ কুমার। এদিন তিনি বলেন, ‘এই স্টেশনে ভূত বলে কিছুই নেই। সবটাই বানানো গল্প। স্টেশন শুরু হওয়ার সময় তৎকালীন স্টেশন মাস্টার বৈদ্যনাথ সরকারের চারটি মেয়ে ছিল। এলাকায় তারা ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ায় বদলি নিয়ে ঝুটঝামেলাহীন ভাবে বাঁচতে চেয়েছিলেন তিনি। আর সেই জন্যই এই ভূতের গল্পটি বানিয়েছিলেন।’

ওই বৃদ্ধের আরও জানান, তাঁর মেয়ে নিদ্রা কুমারের সঙ্গে ফুল পাতিয়েছিলেন অর্থাৎ বন্ধুত্ব করেছিলেন তৎকালীন স্টেশন মাস্টার বৈদ্যনাথ সরকারের বড় মেয়ে চায়না সরকার। দুই পরিবারের মধ্যে একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়। ওই স্টেশন মাস্টারের মেয়েদের, নাম ছিল চায়না, রেখা, শিখা। আর এক মেয়ের নাম একেবারেই মনে করতে পারলেন না পেশায় কৃষক ওই অঙ্গদ কুমার। এখন ওই স্টেশন মাস্টারের পরিবার কোথায় থাকে তা তিনি জানেন না। এই অঙ্গদ কুমারের পরিবারের কাছ থেকেই রেল জমি নিয়ে বেগুনকোদর স্টেশন গড়ে তোলে। এজন্য তারা অর্থ পেয়েছেন ঠিকই। তবে ভীষণই সামান্য। মাত্র ৩,৬০০ টাকা। ২০ বিঘা জমির ওপর তৈরি হয় স্টেশন। তবে সম্পূর্ণ জমিকে এখনও স্টেশনের কাজে ব্যবহার করেনি রেল। তাই ওই কৃষক অঙ্গদ কুমার এখনও রেলের ওই জমিতে চাষাবাদ করে থাকেন।

দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের রাঁচি ডিভিশনের এই স্টেশনের পাশের গ্রাম বামনিয়া। কিন্তু মৌজার নাম বেগুনকোদর। তাই স্টেশনের নামও হয়ে যায় বেগুনকোদর। বছর ছয়েক চলার পর স্টেশন মাস্টারের বানানো ভূতের গল্পের জেরে ১৯৬৬ সালে বন্ধ হয়ে যায় স্টেশন। ২০০৬ সাল নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া শাখা ভূতুড়ে স্টেশনের তকমা সরিয়ে এই স্টেশনকে আবারও চালু করতে রেলের তৎকালীন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়ার সাহায্য চান।

অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে ২০০৭ সালে ফেব্রুয়ারিতে ওই স্টেশন আরও একবার চালু হয়। কিন্তু রেল শর্ত দেয় শুধুমাত্র দিনের বেলায় এই স্টেশনে ট্রেন থামবে। রেলের একজন এজেন্টকে দিয়ে সেখানে টিকিট বিক্রি করা হবে। তারপর থেকে সেই প্রথা আজও চলে আসছে। তবে এই স্টেশনে যে ভূত নেই এই বিষয়টি প্রশাসন প্রমাণ করার পর এখন রাতেও কিছু কিছু ট্রেন থামছে। তবে স্টেশনে সেভাবে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধে নামলেই অন্ধকারে ঢেকে যায় বেগুনকোদর স্টেশন লেখা অক্ষর গুলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকে একেবারে ভৌতিক পরিবেশ!

ভুতুড়ে স্টেশনের তকমা ঘুঁচলেও গুজব রয়েছে রাতের দিকে কোন ট্রেন ওই স্টেশনে ঢুকলে সামনে থেকে একটি ছায়ামূর্তি দৌড়ে আসে। এমনকি মধ্য রাতে চাদর মুড়ে কেউ নাকি ঘোরাফেরাও করে। স্টেশনের পেছনে থাকা কুয়ো থেকে ভয়ংকর আর্তনাদ শোনা যায়। প্রশাসনের দাবি, ভূতের আবহ তৈরি করতে একটা চক্র কাজ করছে। কিন্তু সেই চক্র কারা? ওই চক্রও কি ভূতুড়ে ? এই সব প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা সকলেরই।

Sudipto

সম্পর্কিত খবর