সৌতিক চক্রবর্তী,বোলপুর,বীরভূমঃ গত পরশু বিজেপির দলীয় পতাকা লাগানোকে কেন্দ্র করে বিজেপি-তৃনমূল সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল নানুরের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে। অভিযোগ,বিজেপি কর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি করে তৃনমূল আশ্রিত দুস্কৃতিরা।
ছবিঃ মৃত বিজেপি নেতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছিল,ওই গ্রামে বিজেপির নেতা-কর্মীরা দলীয় পতাকা লাগাতে যায়। সেই পতাকা লাগানো নিয়ে প্রথমে তৃনমূলের সাথে বিজেপির বচসা বাধে। তারপরেই শুরু হয় বোমাবাজি। অভিযোগ,বিজেপি কর্মী স্বরূপ গড়াইকে লক্ষ্য করে গুলি করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় তিনি গুরুতর জখম হন। তড়িঘড়ি তাকে বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে বর্ধমান মেডিকেল কলজে ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখান থেকে তাকে কলকাতায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। এরপরই তিনি গতকাল সন্ধ্যায় মারা যান। সেইদিন রাতেই হাসপাতালে যান বিজেপি নেতারা। স্বরূপ গড়াই নানুরে বিজেপির যুব নেতা হিসাবে খুব জনপ্রিয় ছিল। এরপরই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে আজ বীরভূমে প্রাক্তন জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কালোসোনা মণ্ডল ও বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলের নেতৃত্বে সিউড়ি এসপি অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হন ও রাস্তা অবরোধ করেন। ঠিক একইভাবে নানুর থানার সামনে বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের নেতৃত্বে নানুর থানা ঘেরাও করে বিজেপির নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি শুরু করেন রাস্তা অবরোধ ও অবস্থান বিক্ষোভের কর্মসূচি।
ছবিঃ বিক্ষোভে সামিল শ্যামাপদ মণ্ডল।
সিউড়ি এসপি অফিসের সামনে বিজেপির অবস্থান বিক্ষোভ থেকে বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল পুলিশ ও শাসকদলকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন,“বীরভূম জেলায় প্রতিনিয়ত তৃনমূলীদের দ্বারা ঘর,বাড়ি লুট। ঘর বাড়ি অগ্নি সংযোগ। মারপিট, সন্ত্রাস,খুন, ধর্ষণ হচ্ছে। গত তিনদিন আগেই নানুর ব্লকের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে গিয়ে আমাদের কর্মীকে গুলি করে হত্যা করল। আর এই ঘটনার পিছনে মদত ছিল ওখানকার স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ ইনচার্জ। তার নেতৃত্বে একটি পুলিশ বাহিনী ছিল। তাহলে কী করে এই ঘটনা ঘটলো। ভুবনেশ্বর গড়াইয়ের বাড়ি লুট করার পর কি করে দশ মিনিটের হাঁটা পথ দিয়ে গিয়ে মন্দিরের সামনে গিয়ে বোমাচার্জ করতে পারল। পুলিশ মন করলে এটা আটকাতে পারতো। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন এটা আটকায়নি। আজ আমার একটা ভাই খুন হল। এইরকম ভাবে বীরভূমে প্রায় এক ডজন বিজেপির কার্যকরতারা খুন হয়ে গেলেন। আমি প্রশ্ন করতে চাই বাংলার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পেট ভরাতে কত রক্ত লাগবে? আর তাঁর কত লাশের উপর সরকার চলবে? বীরভূম জেলার পুলিশ প্রশাসন মিথ্যার গল্প ফেঁদে বিজেপি লোকেদের জেল খাটাচ্ছে। ভাড়া দিয়ে মাওবাদী বানাবার,জঙ্গিবানাবার প্রচেষ্টা লাগাচ্ছে। এবার মানুষ যদি বাধ্য হয়ে মাওবাদী,জঙ্গী বাঁধে তার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে। যতদিন বীরভূম পুলিশ অন্যায় কে অন্যায় স্বীকার না করে প্রকৃত নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করার অঙ্গীকার যতদিন পর্যন্ত না করে ততদিন পর্যন্ত আমাদের এই শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভ চলবে। এই অবস্থান বিক্ষোভ প্রতিদিন সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত চলবে।”
ছবিঃ নানুরে অবস্থান বিক্ষোভ।
অন্যদিকে নানুর থানার সামনে বিজেপির অবস্থান বিক্ষোভে সামিল এক বিজেপি কর্মী বলেন,“আজ আমরা একটা অবস্থান বিক্ষোভে বসেছি। এই বিক্ষোভের মূল বিষয় হচ্ছে, স্বরূপ গড়াইয়ের খুনের যারা মূল আসামি তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। ও নানুর ব্লকের থুপসড়া অঞ্চলের তৃণমূল সন্ত্রাসের মূল পান্ডা সেই কেরিম খানকেও অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। এবং আমাদের বিজেপির নিরাপরাধ কর্মীদের জেল থেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশের যে নিষ্ক্রিয় ও তৃনমূলের সঙ্গে যে সহযোগীতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। প্রশাসনকে
নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে হবে। যদি এই সমস্ত দাবি প্রশাসন না মানে তাহলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হবো। এবং আমাদের নিরাপরাধ কর্মী স্বরূপ গড়াইকে তৃনমূল যেভাবে খুন করেছে তারই মূল পাণ্ডা কেরিম খানকে যদি এখনি গ্রেফতার করা হয় তাহলে এখনি আমরা এই বিক্ষোভ তুলে নেবো।”
এদিকে বিজেপির এই অবস্থান বিক্ষোভকে ঘিরে সিউড়ি এসপি অফিসের সামনে অ্যাডিশনাল এসপি সুবিমাল পালের নেতৃত্বে রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। পুলিশি নিরাপত্তায় ঘিরে রাখা হয়েছে এসপি অফিস চত্বরেও। পাশাপাশি নানুরেও রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী।