বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের দাবিদাওয়া ঘিরে আবারও উত্তাল হল কর্মী মহল। যখন কেন্দ্রীয় স্তরে অষ্টম বেতন কমিশনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, ঠিক তখনই পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশন (7th Pay Commission) গঠনের দাবিতে রাজ্য সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠাল ‘ইউনিটি ফোরাম’। মুখ্যসচিব এবং অর্থ দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের উদ্দেশ্যে পাঠানো এই নোটিশ ঘিরে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে।
নোটিশের মূল প্রেক্ষাপট (7th Pay Commission)
ইউনিটি ফোরামের পক্ষে আহ্বায়ক দেবপ্রসাদ হালদার ও পলাশ দত্ত এই নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশে জানতে চাওয়া হয়েছে রাজ্য সরকার কি সপ্তম বেতন কমিশন (7th Pay Commission) গঠনের বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিয়েছে বা নিতে চলেছে? কর্মচারীদের দাবি, কেন্দ্রীয় কর্মীদের তুলনায় রাজ্যের কর্মীরা এখন ডিএ-র ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় কর্মীরা যেখানে ৫৮% ডিএ পান, সেখানে রাজ্যের কর্মীরা পাচ্ছেন মাত্র ১৮%। প্রায় ৪০% বৈষম্যকে সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে দাবি ফোরামের।
ষষ্ঠ বেতন কমিশন নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ
নোটিশে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের কথাও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রিপোর্ট প্রায় চার বছর দেরিতে জমা পড়েছিল, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। তৎকালীন চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারের রিপোর্টে সরকার “ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি” করে জমা দেয় বলেও দাবি। এর ফলে কর্মীরা প্রায় ৪৮ মাসের বেসিক পে, ডিএ এবং বাড়িভাড়া ভাতা থেকে বঞ্চিত হন। ফোরামের অভিযোগ, এই দেরিতে বহু কর্মচারী আর্থিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
উল্লেখ্য, নয়াদিল্লির বঙ্গভবনে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারীরা ৫৮% হারে ডিএ পাচ্ছেন। অথচ একই সরকারের অধীনে পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত কর্মীরা পাচ্ছেন মাত্র ১৮%। এই সিদ্ধান্তকে “খামখেয়ালি” এবং “অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল, কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার সেগুলো মানেনি।
ইউনিটি ফোরামের প্রধান দাবি কী কী?
অ্যাডভোকেট প্রবীর চ্যাটার্জির মাধ্যমে পাঠানো এই নোটিশে ফোরাম কয়েকটি স্পষ্ট দাবি তুলেছে। সেগুলি হল—
- অবিলম্বে কেন্দ্রীয় হারে ৫৮% ডিএ বকেয়া-সহ প্রদান করতে হবে।
- ১০% সুদ সহ ROPA 2019 অনুযায়ী বেসিক পে-এর সাথে ডিএ মার্জ করতে হবে, দিল্লির বঙ্গভবনের কর্মচারীদের মতো।
- সমস্ত আইনি জটিলতা এড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
- কেন্দ্রীয় অষ্টম বেতন কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্যে সপ্তম বেতন কমিশন গঠনের জন্য অবিলম্বে একটি কমিটি গঠন করতে হবে।
- প্রতি ১০ বছর অন্তর বেতন কমিশন গঠনের রীতি অনুযায়ী ২০২৬ সালে নতুন কমিশন গঠিত হওয়া উচিত। সপ্তম বেতন কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৫৮ না হলেও যদি ২-এর কাছাকাছি থাকে, তবে যাদের বর্তমান বেসিক ৩০,০০০ টাকা, তা বেড়ে প্রায় ৬০,০০০ টাকায় পৌঁছাবে, যা কর্মীদের জন্য বড় আর্থিক স্বস্তি দেবে।

আরও পড়ুনঃ বেআইনি নির্মাণ? বড়বাজার অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে নামছে পুরসভা, কড়া সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত মেয়রের
এই নোটিশের জেরে সপ্তম বেতন কমিশন (7th Pay Commission) নিয়ে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নেবে, এখন সেদিকেই তাকিয়ে কর্মচারী মহল।












