বাংলা হান্ট ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) জমি আন্দোলনের সূচনা হয় এখান থেকেই। রাজ্যের বিধানসভায় পালাবদলের জন্য যে যে ঘটনার প্রভাব কাজ করেছিল, তার মধ্যে অন্যতম নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন (Nandigram Land Movement)। সিঙ্গুরকে (Singur Movement) বাদ দিলে ওই আন্দোলনের ভিতের উপরে দাঁড়িয়েই রাজ্যে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল (Trinamool Congress)। এখনও গ্রামীন এলাকায় তৃণমূলের যে শক্ত ঘাঁটি তার জন্য অনেকটাই দায়ী জমি আন্দোলনের ইতিহাস।
তারপর বয়ে গিয়েছে বহু জল। নন্দীগ্রামে তৃণমূলের সংগঠন তৈরির মূল কারিগর শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) এখন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির (Bharatiya Janata Party) মুখ, তিনিই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তাঁর দলবদলের পরে এটাই নন্দীগ্রামে প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর তাতেই এখনও পর্যন্ত দারুণ ফল করল বিজেপি।
২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে নন্দীগ্রামে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল তৃণমূলের। সেবার নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতই গিয়েছিল তৃণমূল দখলে। নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের বাকি ৭ পঞ্চায়েতও ছিল তৃণমূলেরই দখলে। এবার চিত্র অনেকটাই বদল হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবরে নন্দীগ্রামে একাধিক পঞ্চায়েত দখল করেছে বিজেপি।
নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৩টি বিজেপির দখলে। তার মধ্যে রয়েছে ভেকুটিয়া, হরিপুর ও নন্দীগ্রাম। নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের বয়াল ১, ২ এবং খোদামবাড়ি ২ নম্বর পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে এসেছে। এর মধ্যে বয়াল ১ -এ মোট আসন ১৩টি। সেখানে বিজেপি পেয়েছে ৮টি আসন, তৃণমূল পেয়েছে ৫টি আসন। বয়াল ২ -এ মোট আসন ১৬টি। তার মধ্যে বিজেপি ৯টি জিতেছে, তৃণমূল জিতেছে ৭টি। অন্যদিকে খোদামবাড়ি ২ -এ মোট আসন রয়েছে ১৭টি। তার মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ১২টি আসন, তৃণমূল পেয়েছে ৫টি আসন।
শুভেন্দু অধিকারীর নিজের ভোটকেন্দ্র নন্দী নন্দনায়কবাড়ে। সেখানেও নন্দনায়কবাড়ের ৭৭ নম্বর বুথে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী রুম্পা দাস। পূর্ব মেদিনীপুর তো বটেই, নন্দীগ্রামে পঞ্চায়েত ভোট বিজেপির কাছে প্রেস্টিজ ফাইট ছিল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম আসনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন। যদিও সেই ভোটগণনা নিয়ে একাধিক অভিযোগ করে তৃণমূল। পাল্টা শুভেন্দু অধিকারীও প্রায়শই নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর কথা তুলে কটাক্ষ করেন। ফলে পঞ্চায়েত ভোটে, যেখানে গ্রাম বাংলার জনমতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে, সেখানেই জয় পাওয়া বিজেপির কাছে প্রয়োজন ছিল। বিকেল পর্যন্ত যা ফলাফল সামনে এসেছে, তাতে বিজেপির মুখে হাসি আনার জন্য অনেকটাই।
পঞ্চায়েতে নন্দীগ্রাম থেকে তৃণমূলকে সরানোর টার্গেট নিয়েছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রাম-২ পঞ্চায়েত সমিতিতে শাসক দল তৃণমূলকে বেশ কিছুটা পিছনে ফেলে প্রথম স্থানে রয়েছে পদ্মশিবির। তাহলে কি শুভেন্দুর সেই টার্গেট এবার মিলে যেতে চলেছে নন্দীগ্রামে? ট্রেন্ড দেখে এমন জল্পনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ, বয়াল-১ ও বয়াল-২ উভয় গ্রাম পঞ্চায়েতেই এখনও পর্যন্ত প্রথমে রয়েছে বিজেপি। বয়াল-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৩টি আসনের মধ্যে ৮টিতে এগিয়ে বিজেপি এবং ৫টিতে এগিয়ে তৃণমূল।
আবার বয়াল-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৬টি আসনের মধ্যে ৯টি আসনেই পদ্ম শিবিরের মুখে হাসি চওড়া হচ্ছে। তৃণমূল সেখানে এগিয়ে মাত্র ৬টি আসনে। বাকি একটিতে এগিয়ে নির্দল প্রার্থী। অর্থাৎ, নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতেই আপাতত বিজেপির দিকেই পাল্লা ভারী। পাশাপাশি খোদামবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। ১৫টি আসনের মধ্যে এখনও পর্যন্ত আটটিতে এগিয়ে বিজেপি, সাতটিতে তৃণমূল। খোদামবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে আবার ১৭টি আসনের মধ্যে ১২টিতেই এগিয়ে বিজেপি, বাকি ৫টি আসনে লড়াই দিচ্ছে তৃণমূল।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে কার্যত হুঁশিয়ারির সুর শোনা গিয়েছিল নন্দীগ্রামের বিধায়কের গলায়। বলেছিলেন, ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১টিতেই বিজেপির বোর্ড গঠন হবে। বাকি ৬টিতে ‘তৃণমূলমুক্ত’ বোর্ড গঠন হবে বলেও বলেছিলেন তিনি। নন্দীগ্রামে পঞ্চায়েত থেকে তৃণমূলকে সরাতে ‘অ্যান্টিবায়োটিকের’ দাওয়াই দিয়েছিলেন শুভেন্দু। ব্যালটে কি শেষ পর্যন্ত সেই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিফলন মিলবে? এখনও পর্যন্ত যা ট্রেন্ড, তাতে কিন্তু পাল্লা ভারী বিজেপির দিকেই। এখন দেখার শেষ পর্যন্ত নন্দীগ্রামে কার মুখের হাসি চওড়া হয়।