বাংলা হান্ট ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর, আমেরিকা ভারতের (India) ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এদিকে, ভারত এই শুল্কের বোঝা কাটিয়ে ওঠার জন্য একটি দুর্দান্ত পরিকল্পনা করেছে। মূলত, ট্রাম্পের শুল্কের ফলে ভারতের টেক্সটাইল শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে। এটি মোকাবিলা করার জন্য, ভারত তার পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে।
বড় পরিকল্পনা ভারতের (India):
এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, টেক্সটাইল শিল্পকে বাঁচাতে এবং পোশাক রফতানি বাড়াতে সরকার ৪০ টি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরিকল্পনা করেছে। বুধবার (২৭ অগাস্ট ২০২৫) একজন সরকারি আধিকারিক এই তথ্য জানিয়েছেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ব্রিটেন থেকে শুরু করে জাপান,দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, কানাডা, মেক্সিকো, রাশিয়া, বেলজিয়াম, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী (UAE) এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রধান দেশগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মার্কিন শুল্কের প্রভাব পড়বে না: ওই আধিকারিক জানান, “ভারত (India) এই ৪০ টি বাজারে টেক্সটাইল পণ্যের একটি নির্ভরযোগ্য, মানসম্পন্ন, টেকসই এবং উদ্ভাবনী সরবরাহকারী হয়ে ওঠার লক্ষ্যে কাজ করবে। ভারতীয় মিশন এবং রফতানি উন্নয়ন কাউন্সিল (ইপিসি) এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।” উল্লেখ্য যে ভারত ইতিমধ্যেই ২২০ টিরও বেশি দেশে বস্ত্র রফতানি করে। এদিকে, আলোচ্য ৪০ টি দেশ একসঙ্গে প্রায় ৫৯০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গ্লোবাল বস্ত্র এবং পোশাক আমদানি করে। এই আমদানিতে ভারতের (India) অংশ বর্তমানে ৫ থেকে ৬ শতাংশ।
আধিকারিক জানান যে, এমন পরিস্থিতিতে ওই দেশগুলির সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগের এই উদ্যোগ বাজার বৈচিত্র্যের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে। উল্লেখ্য যে, ভারতীয় (India) পণ্যের ওপর আমেরিকার আরোপিত অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে।
আরও পড়ুন: আর নয় অপেক্ষা! দীপাবলির পরেই গ্রাহকদের জন্য এই বড় পরিষেবা শুরু করবে PNB, মিলল আপডেট
এই সেক্টরগুলির রফতানিতেও বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে: ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে বস্ত্র, রত্ন ও অলংকার, চামড়া, মাছ, রাসায়নিক এবং যন্ত্রপাতির মতো সেক্টরে রফতানিতে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধুমাত্র টেক্সটাইল সেক্টর থেকেই আমেরিকায় রফতানি করার ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ ১০.৩ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।
ইতিমধ্যেই পোশাক রফতানি উন্নয়ন কাউন্সিলের (AEPC) মহাসচিব মিথিলেশ্বর ঠাকুর জানিয়েছেন, “২৫ শতাংশ শুল্ক হার ইতিমধ্যেই শিল্প কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। কিন্তু এখন অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশের তুলনায় ভারতের প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা ৩০-৩১ শতাংশ কমে গেছে। এর ফলে, ভারতীয় (India) টেক্সটাইল শিল্প আমেরিকান বাজার থেকে প্রায় বেরিয়ে এসেছে।”
আরও পড়ুন: আগেভাগেই সতর্ক করেছিল ভারত! ভয়াবহ বন্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে পাকিস্তান, ক্রমশ বাড়ছে সঙ্কট
সরকারের কাছ থেকে অবিলম্বে আর্থিক সাহায্যের দাবি: এদিকে, তিনি সরকারের কাছ থেকে অবিলম্বে আর্থিক সাহায্যের দাবি জানান। মূলত, যাতে সংশ্লিষ্ট শিল্প এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারে সেই লক্ষ্যেই সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন যে টেক্সটাইল শিল্প এখন ব্রিটেন এবং EFTA দেশগুলির সাথে বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে ক্ষতি পূরণের সম্ভাবনা খুঁজছে। সরকারের পরিকল্পনার অধীনে, EPC রফতানির বাজার মূল্যায়ন করবে এবং উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন পণ্য শনাক্ত করবে।
এর পাশাপাশি, তিনি বলেন যে সুরাট থেকে শুরু করে তিরুপুর, ভাদোহির মতো টেক্সটাইল পণ্য ক্লাস্টারগুলিকে আন্তর্জাতিক সুযোগের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এছাড়াও, “ব্র্যান্ড ইন্ডিয়া” প্রচারের আওতায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী এবং বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা হবে। উল্লেখ্য যে, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং বাণিজ্য চুক্তি ভারতীয় পণ্যগুলিকে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে সাহায্য করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, এই কৌশলগত প্রচেষ্টা ভারতের (India) জন্য বিশ্বব্যাপী টেক্সটাইল রফতানি বাজারে তার অবস্থান শক্তিশালী করার একটি সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।