বাংলাহান্ট ডেস্ক : বলতে গেলে গোটা জীবনটাই তাঁর কাটল লাল ঝান্ডার নীচে, তাঁর কথা মতন, বাকিটুকুও তাইই কাটবে। জীবনের সূর্যের মধ্যগগনে থেকে অস্ত পর্যন্ত তাতে রইল শুধুই লড়াই, শ্রেণি সংগ্রাম, সাম্যবাদের গান। আক্ষরিক অর্থেই আর সেখানে নেই কিছুই। তাঁর নিজের বলতে ওই পার্টি টুকুই, আর আত্মীয় বলতে পার্টির সদস্যরাই। ঠিকানাও তাঁর পার্টি অফিসই।
তিনি বিমান বসু। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা বাংলার সিপিএমের প্রাক্তন সম্পাদক। বয়সের কারণেই ছাড়তে হল পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটিও। রাজনৈতিক জীবনের গোধূলিতে দাঁড়িয়ে রবিবার কেরলের কান্নুরে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনে বিমান বসুর গলায় উঠে এলো শুধুই দলা পাকানো আবেগ এবং গুচ্ছ গুচ্ছ স্মৃতি। কেন্দ্রীয় কমিটির আমন্ত্রিত হিসেবেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিনি এবার। ৩৭ বছর পর এই প্রথম কেন্দ্রীয় কমিতিতে সক্রিয় ভূমিকাই দেখা গেল তাঁকে।
১৯৮৫ সালে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ লাভ করেন বিমান বসু। তারপর ১৯৯৮ সালে পলিটব্যুরো সদস্য। মাঝে গড়িয়েছে অনেকগুলো বছর। সময়ের শিলালিপি ক্ষয়েছে নিজের নিয়মেই। ৮৩ বছর বয়সি এই নেতার পদ বলতে আজ শুধুই বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান। রাজনৈতিক জীবনের বিদায়বেলায় এসে যেন আবেগ ঘিরে ধরছিল তাঁকে। বারবার বলছিলেন মায়ের কথা, মায়ের কথাতেই বাম রাজনীতিতে আসার কথা। ‘শেষ নিশ্বাস অবধি পার্টিই করব। আর কিছুই নেই জীবনে’ একথাও বলতে শোনা গেল বর্ষীয়ান এই নেতাকে।
মায়ের কথাতেই তিনি যোগ দেন বাম রাজনীতিতে। কিছুদিনের মধ্যেই পার্টির হোলটাইমার হিসেবে গিয়ে ওঠেন বেনিয়াপুকুরের কৃষকসভার অফিসে। এরপর প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনই হয়ে ওঠে তাঁর পাকাপাকি ঠিকানা। জীবনটাকে ফিরে দেখলে সত্যিই স্পষ্ট, ব্যক্তিগত জীবনের প্রায় কিছুই নেই সেখানে।
এদিন কান্নুরের লাল চত্ত্বরটার মাঝেই দাঁড়িয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘এতদিন আমিই পার্টির সব জানতাম। কাউকে কিছু জানাতে হত না। এখন পার্টি আমাকে যা বলবে, সেটাই করব। পার্টিই করব শেষ নিশ্বাস ত্যাগ পর্যন্ত। কারণ, আমার তো পার্টি ছাড়া আর কিছু নেই।’ এত লালের মাঝেও যেন কেমন যেন ফিকে হয়ে উঠেছিল কান্নুরের পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিন। বিদায়বেলার গোধূলির মতই যেন মিলিয়ে গেল তিরাশির এই বাম নেতার রক্তিমতাটুকুও।