চিন্তা বাড়াচ্ছে নতুন আতঙ্ক! বায়োলজিক্যাল হামলার দিকে ঝুঁকছে জঙ্গিরা, কীভাবে নিজেকে রাখবেন সুরক্ষিত?

Published on:

Published on:

Biological War is raising concern for India.
Follow

বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ জৈব নাশকতা (Biological War)! বদলে যাচ্ছে সন্ত্রাসের রূপ। অতীতে জঙ্গি হামলা, বিস্ফোরণ বা সীমান্তে অনুপ্রবেশই ছিল দেশের প্রধান নিরাপত্তা-চিন্তা। কিন্তু আজ পরিস্থিতি আরও জটিল, আরও বিপজ্জনক। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আধুনিক সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় ভয় এখন জৈব নাশকতা ও রাসায়নিক হামলা। ভারতের চারপাশে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বিপদ আরও ঘনিয়ে উঠছে। যে কোনও সময়, যে কোনও শহরে এমন হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আর এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন সাধারণ মানুষই।

ভারতের চিন্তা বাড়াচ্ছে জৈব নাশকতা (Biological War):

এই শঙ্কার ভিত্তি রয়েছে অতীতের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনে। ২০০১ সালে কার্গিল যুদ্ধের পর সুব্রহ্মণ্যম কমিটি যে ৩২ দফা পরামর্শ দেয়, তার অন্যতম ছিল— দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয়হীনতা অত্যন্ত ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। কমিটির রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, ভারতের শত্রুরা দেশের ভিতরে সহজেই নাশকতা (Biological War) চালিয়ে পালিয়ে যেতে পারছে, কারণ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থা দুর্বল।

আরও পড়ুন: ২৫ বছরে দশম বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী! প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপস্থিতিতে শপথ গ্রহণ করলেন নীতীশ কুমার

তারও দুই দশক পরে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপীন রাওয়াত ভারতীয় সেনাকে নির্দেশ দেন ‘বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার’-এর জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে। রাওয়াত স্পষ্ট বলেন, জৈব নাশকতা (Biological War) এখন আধুনিক যুদ্ধেরই অংশ এবং দেশের মধ্যেও এর সম্ভাবনা বাড়ছে। এই ধরনের হামলা আটকানো কঠিন হলেও অসম্ভব নয়—শুধু লাগবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা।

সোমবার রাতে দিল্লিতে কয়েক হাজার কেজি বিস্ফোরক উদ্ধারের পর ফের উঠে আসছে উদ্বেগের সেই প্রশ্ন। এত বিস্ফোরক নিয়ে ঠিক কী করতে চাইছিল জঙ্গিরা? তা কি কেবল গাড়িবোমার লক্ষ্যেই ব্যবহার হত? নাকি সঙ্গেসঙ্গেই পরিকল্পনা ছিল জৈব বা রাসায়নিক নাশকতার? নিরাপত্তা সূত্রে আশঙ্কা—‘রেসিন’-এর মতো মারাত্মক জৈব বিষ খাবার বা পানীয় জলে মিশিয়ে দেওয়া হলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে। আবার ‘সোরিন’-এর মতো মারাত্মক স্নায়ুবিষ ফল বা সবজির গায়ে মাখিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হলে বিপর্যয় অনিবার্য।

Biological War is raising concern for India.

আরও পড়ুন: বদলে যাবে SSC-র নতুন তালিকা! মামলা হতেই কড়া নির্দেশ হাইকোর্টের

এই পরিস্থিতিতে পরিষ্কার—জৈব যুদ্ধ (Biological War) ঠেকাতে ভারতের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়। সব রাজ্যেই পরিকাঠামো দুর্বল। সেনাবাহিনীর ‘নিউ এজ ওয়ারফেয়ার গ্রুপ’ এই ধরনের ঘটনায় সামরিক প্রস্তুতি নিলেও, বৃহত্তর শহর বা জনবহুল এলাকায় এ ধরনের হামলা হলে সেনা নামার আগেই অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। অথচ জৈব যুদ্ধের প্রথম শর্তই হল— বিপদের উৎস এবং ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাকে প্রাথমিক পর্যায়েই নিয়ন্ত্রণ করা।

এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের আরেকটি পরামর্শ— পুরনো, বড় জানালাবিহীন, তুলনামূলকভাবে ‘সিল’ করা বাড়িতে বিপদের সম্ভাবনা কম। খোলা ঘর বা আধুনিক ক্ষুদ্র বাসস্থান জৈব বা রাসায়নিক হামলায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। খাবারের বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা কঠিন হলেও বাতাস-নির্ভর বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়ানো আটকাতে পুরনো ধরনের ঘর অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। তাই পরিস্থিতি কখনও গভীর হলে, পুরনো বাড়ির খোঁজে ছোটাছুটি করতে হতে পারে সাধারণ নাগরিকদেরই। দেশের নিরাপত্তা কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে এবং আধুনিক যুদ্ধের নতুন রূপের মোকাবিলা করতে বিশেষজ্ঞদের মতে অবিলম্বে উদ্যোগ নিতে হবে। দেরি হলে বিপদ যে আরও বাড়বে, তার সতর্কতা মিলছে আগের অভিজ্ঞতা থেকেই।