বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। এই আবহে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বীরভূমের সিউড়ির সভা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। বাংলায় পা থেকেই ‘শাহী’ টার্গেট বেঁধে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সিউড়ির সভা থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, “আগামী লোকসভায় ফের নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। বাংলা থেকে আমাদের ৩৫টি আসন দিন।” সেই মন্তব্য ঘিরেই তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি।
অন্যদিকে, বঙ্গ বিজেপি সূত্রে খবর, অনুব্রত গড়ের পর শাহজীর পরবর্তী গন্তব্য হবে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। আগামী ৮ মে ফের দুদিনের জন্য বঙ্গ সফরে আসতে পারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রথম দিন জনসভা এবং দ্বিতীয় দিন সাংগঠনিক বৈঠক করত পারেন তিনি। সেই দন বাঙালির পঁচিশে বৈশাখ হওয়ায় রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনেও অংশ নিতে পারেন তিনি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতেও যেতে পারেন শাহ।
যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কবে আসবেন কথায় যাবেন সেসব কোনোকিছুই এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েতের আগে দ্বিতীয় শাহী সফরের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। মুর্শিদাবাদে বহরমপুরে সভা করার প্রাথমিক চিন্তাভাবনা করছে বিজেপি। তবে প্রথমে বীরভূমের সিউড়ি আর এবার মুর্শিদাবাদ কেন? কারণ হিসেবে যা জানা যাচ্ছে তা হল, পূর্বে রাজ্যের যে সমস্ত জায়গায় হারের মুখ দেখেছে বর্তমানে হেরে যাওয়া আসনগুলিকেই পাখির চোখ করেছে বিজেপি।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ টানা মুর্শিদাবাদের বহরমপুর জিতে চলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury)। তাই কংগ্রেসের সেই শক্তিশালী আসনই এখন টার্গেট বিজেপির। পাশাপাশি সেই তালিকায় রয়েছে জঙ্গিপুর ও উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত এবং বসিরহাটকে। এবার যদি আসি অংকের হিসেবে…. ২০১৪ সালে বহরমপুর থেকে ৩,৫৬,৫৬৭ ভোটে জিতেছিলেন অধীর। ২০১৯ সালে অধীর এই আসন থেকে জিতেছিলেন ৮০,৬৯৬ ভোটে। সেই সময় দ্বিতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল আর ১১ শতাংশ ভোট নিয়ে বিজেপি তৃতীয় স্থান দখল করেছিল।
যদি শতাংশের হিসেবে পর্যালোচনা করা যায় তবে কংগ্রেসের ভোট কমেছে সেখানে। অন্যদিকে, ২০২১ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে জয় পেয়েছিল বিজেপি। অন্যদিকে, গত বিধানসভা নির্বাচন সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে একটিতেও জিততে পারেনি শক্তিশালী কংগ্রেস। ফলে কিছুটা হলেও জেতার পথ প্রশস্ত হয়েছে বিজেপির। অন্যদিকে, সম্প্রতি এই জেলারই বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক গ্রেফতার হয়েছেন সিবিআই এর হাতে। গতবার সেখানে তৃণমূল জিতলেও এবার নিয়োগ দুর্নীতির বেশ প্রভাব পরবে বলেই ধারণা গেরুয়া শিবিরের।
অন্যদিকে যদি বলি সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের সাগরদীঘির উপনির্বাচন সমস্ত ঘটনাকে বদলে দিয়েছে। পাল্টেছে সমীকরণ। বর্তমানে আর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তৃণমূলের সাথে নেই বলেই ধারণা অনেকের। এই সুবর্ণ সুযোগ গুলিকে কাজে লাগাতেই মরিয়া বিজেপি শিবির। পাশাপাশি বহরমপুর ভোটের একটা বড় অংশ আসতে পারে বিজেপির কাছে। তাই সবমিলিয়ে পাখির চোখ এখন মুর্শিদাবাদ আর সেখানের সংখ্যালঘু ভোটাররা।
যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা হিন্দু, মুসলমান এই ভাবে ভোটের হিসাব করি না। প্রধানমন্ত্রীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ নীতিই আমাদের সম্বল। আর অধীর চৌধুরীর পুরনো ক্যারিশমা আর নেই। মানুষ এটাও বুঝছেন, কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে আখেরে কোনও লাভ নেই। যে বামেদের সঙ্গে অধীরের পুরনো লড়াই, তাদের সঙ্গেই বর্তমানে সখ্য মোটেও সুবিধা দেবে না।’’