বাংলা হান্ট ডেস্ক: ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার (Madhyamik Pariksha) ফলাফল। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় সাফল্যের আনন্দ প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর মনে এক বিশেষ স্থান দখল করে থাকে। তবে বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন এক লড়াকু পড়ুয়ার প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যার উত্তরণের কাহিনি জানলে চমকে উঠবেন আপনিও। শারীরিক এবং আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রেখে শুধুমাত্র নিজের মনের জোরকে সম্বল করেই ওই পড়ুয়া তৈরি করে ফেলেছে এক নজিরবিহীন উত্তরণের কাহিনি (Success Story)। আর এই ভাবেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে পশ্চিম মেদিনীপুর (Paschim Medinipur) জেলার জঙ্গল অধ্যুষিত শালবনী ব্লকের পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র প্রেমজিৎ সাউ।
সরকারি শংসাপত্র অনুযায়ী, প্রেমজিৎ ১০০ শতাংশ দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী হলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানিয়েছেন ১০০ শতাংশ না হলেও ৯০ শতাংশের কাছাকাছি দৃষ্টিহীন প্রেমজিৎ। যদিও, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এটাও জানিয়েছেন যে, “শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রেমজিৎ ক্লাসে রিডিং পড়তে না পারলেও মন দিয়ে পড়া শুনে সেটাই মনে রাখার চেষ্টা করত। পাশাপাশি, এতটাই মেধাবী ছিল যে পরেরদিন ওই পড়া জিজ্ঞেস করা হলে ক্লাসে সবথেকে ভালো উত্তর পেতাম প্রেমজিতের কাছ থেকেই।” আর এই ভাবেই দু’চোখে আঁধার নিয়েও ৭০০-র মধ্যে ৬০১ নম্বর (৮৫.৮৬ শতাংশ) পেয়ে বিদ্যালয়ে চতুর্থ হয়েছে এই কৃতী পড়ুয়া।
এদিকে, প্রেমজিতের এই বিরাট সাফল্যে অত্যন্ত খুশি এবং গর্বিত হয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অতনু মণ্ডল জানিয়েছেন, “আমাদের স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে প্রেমজিতের সাফল্য নিঃসন্দেহে বাকিদের থেকে অনেকটাই আলাদা এবং অনেক বেশি উজ্জ্বল। আমরা প্রেমজিতের মতো ছাত্র পেয়ে অত্যন্ত গর্বিত।” পাশাপাশি, বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ঠিক একই মতামত ব্যক্ত করলেন। তাঁরা জানালেন, “এরকম মেধাবী, বিনয়ী আর লড়াকু ছেলে আমরা দেখিনি। ওর মনের ইচ্ছেশক্তিও অসীম।”
আরও পড়ুন: হার্দিক-জাদেজায় নেই ভরসা! রোহিতের পর অধিনায়ক হিসেবে বোর্ডের পছন্দ ছিল শ্রেয়স, কিন্তু….
ছিল না কোনো গৃহশিক্ষক: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, কোনো গৃহশিক্ষক ছাড়াই প্রেমজিৎ মাধ্যমিকে যে নম্বর পেয়েছে তা প্রত্যেকেই অবাক করবে। বাংলা এবং ইংরেজিতে প্রেমজিতের প্রাপ্ত নম্বর হল ৮৭ এবং ৮৩। অঙ্ক ও পদার্থ বিজ্ঞানে তার প্রাপ্ত নম্বর ৯৩ এবং ৮২। এদিকে, জীবন বিজ্ঞান, ইতিহাস এবং ভূগোলে তার প্রাপ্ত নম্বর হল যথাক্রমে ৮৬, ৮০ এবং ৯০। উল্লেখ্য যে, ভাগ্যের কঠিন পরিহাসে ৭ বছর আগেই মাকে হারিয়েছে প্রেমজিৎ। বছর সাতেক আগে রান্না করার সময় শাড়িতে উনুনের আগুন লেগে গিয়ে প্রাণ হারান প্রেমজিতের মা ববিতা সাউ। এদিকে, তার ভাই দেবপ্রিয় জন্ম থেকেই দাদার মতো একশো শতাংশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার স্বীকার। সে নবম শ্রেণির ছাত্র। পাশাপাশি, সেও দাদার মতোই মেধাবী। পরিবারে চরম আর্থিক অনটনকে সঙ্গী করেই এই দুই ভাই করোনার মতো ভয়াবহ মহামারীর সময়ে বাবার সঙ্গে ভিক্ষে পর্যন্ত করেছে।
আরও পড়ুন: BCCI-র মোক্ষম চাল, চরম সুখবর KKR-র জন্য! প্লে-অফে আর রইল না বাধা
আর এইভাবেই সমস্ত বাধাকে একে একে অতিক্রম করে নিজের লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে চলেছে প্রেমজিৎ। শুধু তাই নয়, প্রেমজিতের এই বিরাট সাফল্যে খুশি এক সময়ে মাও অধ্যুষিত পিড়াকাটা সংলগ্ন (দেড়-দু কিলোমিটার দূরে) মালিদা গ্রামের বাসিন্দারাও। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, প্রেমজিৎ বড় হয়ে WBCS অফিসার হতে চায়। এক্ষেত্রে প্রেমজিৎ শুনেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের “১০০ শতাংশ দৃষ্টিহীন” অতিরিক্ত জেলাশাসক IAS কেম্পা হোন্নাইয়ার কথা। আর এই ভাবেই ভাঙাচোরা বাড়িতে থেকেই দারিদ্রের সাথে লড়াই করে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে প্রেমজিৎ। (প্রেমজিতের-এর সাথে যোগাযোগের নম্বর- ৯৫৪৭৬৬৫৪৯৮)