বাংলা হান্ট ডেস্কঃ প্রকৃতির খেলা ভীষণ অদ্ভুত, তার এই খেলার কারণেই একদিকে যেমন সৃষ্টি হয়েছে সুন্দর এই পৃথিবী, তেমনি আবার এমন অনেক স্থানও আছে যা চিরঅন্ধকার। চিরকাল মানুষের লড়াই ছিল অসম্ভবের বিরুদ্ধে, অসম্ভবকে জয় করতেই নিজের মন প্রাণ বারবার ঢেলে দিয়েছে সে। আর সেই কারণেই বলা হয় প্রয়োজনীয়তাই হল আবিষ্কারের জননী। ইংরেজির এই প্রবাদ বাক্যটি কতখানি সত্যি, আজ যে ঘটনা বলতে চলেছি সেটাই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সূর্যের আলো যদি কয়েক দিন না থাকে তাহলে কী অবস্থা হবে তা কি কল্পনাও করতে পারেন? সূর্যের আলো ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব বললেই চলে কারণ উৎপাদিত হবে না কোন ফসল, বাঁচতে পারবেনা জলচর, উভচর স্থলচর কোন প্রাণীই। অর্থাৎ কার্যত সূর্যের আলো প্রতিমুহূর্তে ভীষণরকম প্রয়োজন জীব জগতের জন্য। তবে ইতালিতে এমন এক গ্রাম আছে যেখানে সূর্যের আলো একেবারেই পরে না। এই ভিগালেনা ছিল এমন একটি গ্রাম যেখানে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস অব্দি সূর্যের মুখই দেখতে পেতেন না গ্রামবাসীরা।
আসলে গ্রামটি উত্তর মিলান থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে একটি নিচু গর্তে অবস্থিত, যার ফলে এখানে সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারতো না। এই গ্রামের বাসিন্দা মাত্র ২০০ জন, কিন্তু গোটা শীত জুড়ে তাদের থাকতে হতো ভীষণই কষ্টে। তাপমাত্রা শীতলতা চরমসীমা অতিক্রম করত এই সময়। কার্যত এখানকার বাসিন্দারা এটাকেই নিজেদের ভবিতব্য বলে ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু এই চূড়ান্ত প্রয়োজনীয়তা থেকেই জন্ম নেয় এক অদ্ভুত আবিষ্কার। গ্রামটির জন্য একটি কৃত্রিম সূর্য তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন প্রকৌশলী বোজ্জানি। এ বিষয়ে তিনি সাহায্য নেন তার বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার গিয়ন্নি ফেরারির।
কিভাবে তৈরি করা হয় এই কৃত্রিম সূর্য? ২০০৬ সালে তারা ঠিক করেন গ্রামের কাছাকাছি অবস্থিত একটি পাহাড়ের চূড়ায়, একটি বিশাল আয়না বসাবেন তারা। আয়নাটি এমন ভাবেই তৈরি করা হবে, যাতে সূর্যের আলো তাতে প্রতিফলিত হয় এবং তার দ্বারা আলোকিত হয় গোটা গ্রাম। যেমন ভাবা ঠিক তেমনি কাজ বোজ্জানি এবং তার বন্ধু গিয়ন্নি মিলে বানিয়ে ফেলেন ৮ মিটার চওড়া এবং ৫ মিটার লম্বা একটি বিশাল আয়না। পুরো আয়নাটি তৈরি করতে এবং বসাতে তাদের খরচ পড়ে ছিল এক লক্ষ ইউরো। কিন্তু এই আয়নাতেই কার্যত গোটা গ্রামের ভবিষ্যত বদলে দেয়। এখন এই গ্রামে দিনে ৬ ঘন্টা সূর্যের আলো থাকে এই কৃত্রিম আয়নাটির কারণে।