বাংলা হান্ট ডেস্কঃ এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (SSC Recruitment Scam) ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। দীর্ঘ তিন মাসের শুনানির পর গত সোমবার ২০১৬ সালে পুরো প্যানেল বাতিল করেছে হাইকোর্ট। যার জেরে বাতিল হয়েছে ২৫৭৫৩ চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগ। বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বার রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ রায়দান দিতে গিয়ে জানায়, সুপার নিউমারারি পদ বেআইনিভাবে গড়া হয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পরই একাধিক প্রশ্ন সামনে আসছে। সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, এসএসসিতে নিয়োগ করতে বেআইনি ভাবে অনেক অতিরিক্ত পদ (সুপারনিউমেরিক পদ) তৈরি করা হয়েছিল। সেই সব নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছিল রাজ্য সরকারই। এসএসসি সংক্রান্ত সমস্ত মামলার তদন্ত করার জন্য সিবিআইকে (Central Bureau Of Investigation)। নির্দেশ দেয় আদালত।
দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ‘যাকে প্রয়োজন তাকেই হেফাজতে নিতে পারবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। বেআইনিভাবে সুপার নিউমারারি পোস্ট করে চাকরি পাওয়াদেরও হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই।’ এরপরই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন, “চোরদের নিয়োগ করতে বাড়তি পোস্ট তৈরি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২২ সালের ৫ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেদিন ক্যাবিনেটে যারা উপস্থিত ছিল তাদের সবাইকে অবিলম্বে সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানাচ্ছি।”
এদিকে বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে শুভেন্দুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাল্টা মুখ খুললেন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Bose)। তিনি বলেন, “সুপার নিউমেরিক পোস্ট থেকে সরকার কাউকে চাকরি দেয়নি। যে একজনকে দেওয়া হয়েছিল সেটা তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে। যিনি বর্তমানে তমলুক কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী।”
সোমবার এসএসসি মামলার রায়দানে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট জানায়, সিবিআই রাজ্য সরকারের সঙ্গে যুক্ত সেই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করবে, যারা অতিরিক্ত পদ তৈরির অনুমোদন দিয়েছিলেন এবং সেই সংক্রান্তি প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রয়োজনে যে কাউকে হেফাজতে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে সিবিআই। বিপুল নিয়োগ দুর্নীতির প্রকৃতি এবং ব্যাপ্তি জানতে, কারা এর সঙ্গে জড়িত সেই বিষয়ে তদন্ত করবে সিবিআই।
বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারপতির মন্তব্য ছিল, ”এসএসসিতে বেআইনি চাকরি রক্ষা করতে রাজ্য সরকারের মন্ত্রিসভাও বিভিন্ন সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নিয়োগগুলি সম্পূর্ণ বেআইনি, প্যানেলের বাইরে এবং প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে করা হয়েছে জেনেও দুর্নীতি করে পাওয়া চাকরি বাঁচাতে চেয়েছেন সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা।” রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভাতেও বেআইনি চাকরি রক্ষার স্বার্থে সিদ্ধান্তগুলির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আগেই আদালতে সিবিআই জানায়, যে সময়ে সুপার নিউমারারি পদ তৈরির জন্য রাজ্য মন্ত্রিসভাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেই সময়ের একটি চিঠি তাদের হাতে এসেছে। যা ২০২২ সালের মে মাসের ৫ তারিখের। প্রসঙ্গত, সেই সময় শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায় তখন ছিলেন শিল্পমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: BJP-র মহিলা কর্মীকে ‘সেক্স ওয়ার্কার’ বলে গালিগালাজ, এজেন্টকে মারধর! কমিশনের দ্বারস্থ সুকান্ত
নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ, গ্ৰুপ-সি, গ্ৰুপ-ডি সব মিলিয়ে প্রায় ৭০০০ নিউমারারি পদ তৈরির জন্য মন্ত্রীসভাকে সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ সামনে আসে। এই নিয়ে সেদিন ব্রাত্য বসুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা যেহেতু রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি, তাই এ বিষয়ে এখন আমি কিছু বলব না।’ তবে গতকাল সাংবাদিক বৈঠক করে ব্রাত্যর দাবি, সুপার নিউমেরিক পোস্ট থেকে কাউকে চাকরি দেয়নি সরকার।