৫০টি ফ্র্যাকচার, ৬টি সার্জারি, ৬৫% অক্ষম! সবকিছুকে হার মানিয়ে ফাতিমা আজ নিজেই ডাক্তার

বাংলাহান্ট ডেস্ক : “এভাবেও ফিরে আসা যায়” …সত্যি মানুষ চাইলে হয়তো হাজারো প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে পারেন। জন্মের তিনদিন পর থেকেই শুরু হয়েছিল তার জীবন সংগ্রাম। আর জীবন সংগ্রামের প্রত্যেকটি পদক্ষেপে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। একের পর এক শারীরিক বাধাকে অতিক্রম করে তিনি আজও মানুষের পাশে রয়েছেন মানুষের সেবায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি হলে কোঝিকোড়ের স্থানীয় চিকিৎসক ফাতিমা আসলা।

বিখ্যাত এই চিকিৎসকের পোশাকি নাম ফাতিমা হলেও এলাকার বাসিন্দারা তাকে আদর করে ‘পাথু’ বলেই ডাকে। কোজিকোড়বাসীর কথায়, তার কাছে চিকিৎসা করাতে গেলে যখনই তথাকথিত ‘চেম্বারে’ প্রবেশ করা হয়, তখনই যেন মুহূর্তের মধ্যে কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হয়ে যায়। এর পিছনে কারণ অবশ্য একটাই ফাতিমার ‘মুখের হাসি’। ফাতিমার এই মুখের হাসি যেন তার আত্মজীবনী নীলাভুপোল চিরিকুন্ন্যা পেনকুট্টি নামের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। আসলে, “নীলাভুপোল চিরিকুন্ন্যা পেনকুট্টি” নামের অর্থ হল গোধূলির হাসি মুখে লেগে থাকা একটি মেয়ে।

আজকের সফল নারী ফাতিমা গড়ে ওঠার পিছনে রয়েছে একটি ছোট্ট মেয়ের জীবন সংগ্রামের কথা। জন্মের কদিন পরেই তাঁর ধরা পড়ে অস্টিওজেনেসিস ইম্পেরফেক্টা অর্থাৎ ভঙ্গুর হাড়ের রোগ। এরপর আসলার জীবন শুরু হয় হুইলচেয়ারে কিন্তু তার স্বপ্ন কখনো আটকে পড়েনি হুইল চেয়ারের মধ্যে। ফাতিমার কথায়, “আমাকে নিয়মিত আমার মা সঙ্গে করে স্কুলে নিয়ে যেতেন। মাঝে মাঝে অটোতে চড়েও স্কুলে গিয়েছি। আমি যখন একাদশ শ্রেণীতে পড়ি, তখন রাজ্য সরকারের আমার জন্য একটি তিনচাকার গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। আমি নিজেই সেটাকে চালাতাম।”

স্কুলশিক্ষা শেষ করেও থেমে থাকেননি আসলা। পা রেখেছেন কলেজে। পরে তিনি কোট্টায়ামের এনএসএস হোমিও মেডিকেল কলেজে ব্যাচেলর অফ হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিএইচএমএস) থেকে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার হিসাবে তার কোর্স সম্পন্ন করেন এবং এএনএসএস হোমিও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাউস সার্জন ছিলেন। ফাতিমা অবশ্য ছোট থেকেই চিকিৎসক হতেই চেয়েছিলেন।

jpg 20220622 192513 0000

বৈবাহিক জীবনেও নিজের মনের মানুষের সাথেই ঘর করছেন ফাতিমা। ২০২০ সালে আসলা কিছু বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে লক্ষদ্বীপের স্থানীয় এবং ডিজিটাল শিল্পী ফিরোজ নেদিয়াথের সাথে দেখা করেছিলেন। ফিরোজের আচরণ ও ব্যক্তিত্ব আসলাকে মুগ্ধ করেছিল। সাক্ষাতের ঠিক এক বছরের মধ্যেই তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। ছয়টি অস্ত্রোপচার এবং ৬৫ শতাংশ অক্ষমতা যে তার আত্মবিশ্বাসকে টলাতে পারেনি একথা বলাই বাহুল্য।

Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর