অনিশ্চিত চাকরি, বঞ্চিত পড়ুয়া! মাদ্রাসা ইস্যুতে বড় নির্দেশ হাই কোর্টের

Published on:

Published on:

Calcutta High Court Allows Indefinite Dharna by Un-Aided Madrasa Staff
Follow

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ স্থায়ী চাকরি, বেতন বৃদ্ধি-সহ একাধিক দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলনের পথে হাঁটতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্বীকৃত আন-এডেড মাদ্রাসার শিক্ষক ও কর্মচারীরা। পুলিশের অনুমতি না মেলায় শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হয় সংগঠন। আদালতের নির্দেশে এবার অনির্দিষ্টকালীন ধরনা কর্মসূচির অনুমতি মিলল।

হাই কোর্টের (Calcutta High Court) অনুমতিতে ধরনার সবুজ সংকেত

ওয়েস্ট বেঙ্গল আন-এডেড মাদ্রাসা ঐক্য মঞ্চের তরফে সল্টলেকে লাগাতার ধরনা-আন্দোলনের অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। তবে সেই আবেদন খারিজ করে দেয় পুলিশ। এরপর আন্দোলনের অনুমতি চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হয় সংগঠনটি। শনিবার বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধরনা কর্মসূচি করার অনুমতি দেন।

কোথায় হবে আন্দোলন? কী শর্ত দিল আদালত?

আদালতের (Calcutta High Court) নির্দেশ অনুযায়ী, এই ধরনা সল্টলেকে নয়, করা যাবে কলেজ স্কোয়ারের বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটে। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি শর্তও বেঁধে দিয়েছে হাইকোর্ট। শর্ত গুলি হল –

  • ধরনায় একসঙ্গে ২০০ জনের বেশি উপস্থিত থাকা যাবে না
  • কোনও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া যাবে না
  • শব্দ দূষণ বিধি মেনে মাইক ব্যবহার করতে হবে
  • সরকারি সম্পত্তির কোনও ক্ষতি করা যাবে না

কতজন যুক্ত? কী দাবি সংগঠনের?

সংগঠনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের বিভিন্ন স্বীকৃত আন-এডেড মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ২৫০০-এর বেশি শিক্ষক, শিক্ষিকা ও কর্মচারী। আদালত (Calcutta High Court) সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই মাদ্রাসাগুলিকে অনুমোদন দেয়। দীর্ঘ আট বছর পর, ২০২১ সালে সল্টলেক সিটি সেন্টারের সামনে ৪৬ দিনের অবস্থান বিক্ষোভের পর রাজ্য সরকার ন্যূনতম সাম্মানিক ঘোষণা করে।

সাম্মানিক কত?

বর্তমানে যে সাম্মানিক দেওয়া হয়, তা হল—

  • গ্রুপ ডি: ৫০০০ টাকা
  • গ্রুপ সি: ৫৫০০ টাকা
  • গ্রাজুয়েট শিক্ষক: ৬০০০ টাকা
  • পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষক: ১২,০০০ টাকা

এই সাম্মানিক সম্পূর্ণ অনুদানভিত্তিক, এবং বর্তমান সময়ে তা অত্যন্ত নগণ্য বলে দাবি ওয়েস্ট বেঙ্গল আন-এডেড মাদ্রাসা ঐক্য মঞ্চের।

শিক্ষক-কর্মচারী ও পড়ুয়াদের দুরবস্থা

ঐক্য মঞ্চের দাবি, প্রায় ২৫০০ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীর কোনও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা নেই। অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীরা বই ছাড়া প্রায় সব মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদেয় জামা-জুতো ও ব্যাগ বারবার আবেদন করেও এখনও মেলেনি বলে অভিযোগ। সংগঠনের দাবি, এই সব আন-এডেড মাদ্রাসায় পড়াশোনা করা প্রায় ৪০ হাজার ছাত্রছাত্রী, যাদের বেশিরভাগই পিছিয়ে পড়া ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার, তারা চরম বৈষম্যের শিকার।

মিড ডে মিল নিয়েও অভিযোগ

এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ, বারবার আবেদন জানানো সত্ত্বেও এই সব মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা কেন্দ্রীয় সরকারের মিড ডে মিল প্রকল্প থেকেও বঞ্চিত। এর জেরে পড়ুয়াদের পুষ্টি ও বিদ্যালয়মুখী হওয়ার প্রবণতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি সংগঠনের।

দীর্ঘদিন ধরে কোনও স্থায়ী সমাধান না মেলায় অবশেষে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল রিকগনাইজ আন-এডেড মাদ্রাসা ঐক্য মঞ্চ।
সংগঠনের নেতৃত্বের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে রাজ্যের ২৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মুখে পড়বে। পাশাপাশি প্রায় ৪০ হাজার ছাত্রছাত্রীর স্কুলছুট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হবে।

Calcutta High Court Allows Indefinite Dharna by Un-Aided Madrasa Staff

আরও পড়ুনঃ মেসি বিতর্কে আসল দোষী আড়ালে? শতদ্রুকে সামনে রেখে তৃণমূলকে রক্ষা করা হচ্ছে, অভিযোগ শুভেন্দুর

এই সব দাবিকে সামনে রেখেই আগামী ১৭ ডিসেম্বর, বুধবার থেকে কলেজ স্কোয়ারের বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটে, কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) অনুমতিক্রমে অনির্দিষ্টকালীন অবস্থান বিক্ষোভে নামতে চলেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল রিকগনাইজ আন-এডেড মাদ্রাসা ঐক্য মঞ্চ।