বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নিজের প্রেমিকাকে ধর্ষণ (Rape Allegation), তার ভিডিয়ো করে রাখা এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ব্ল্যাকমেল করে বারংবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করা। ছ’বছর আগে এমনই মারাত্মক অভিযোগ উঠেছিল এক যুবকের বিরুদ্ধে। যার জেরে জেলও খাটতে হয়েছে তাকে। হাতছাড়া হয়েছে চাকরির সুযোগ। সামাজিক সম্মান তো গেছেই, মানসিকভাবেও তৈরী হয়েছে গভীর ক্ষত। হাইকোর্টে চলছিল মামলা। সব শেষে অভিযুক্তকে সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। যুবকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা, যাবতীয় চার্জশিট খারিজ করেছেন হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি বিচারপতি শম্পা দত্ত পাল।
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের ঘটনা। উলুবেড়িয়ার বছর পচিঁশের এক যুবতী ওই যুবকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি জানান, এক বিয়েবাড়িতে অভিযুক্ত যুবকের পরিচয় হয়। এরপর তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। একবার দুজনে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেই সময় জোর করে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন যুবক। ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করে রাখা হয়। এরপর সেই ভিভিও, ছবি নিয়ে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে একাধিকবার তাকে ঘনিষ্ঠ হতে বাধ্য করেন ওই যুবক।
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে পুলিশে অভিযোগ করেন ওই যুবতী। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন অভিযুক্ত। দেড় মাস মতো জেল খাটতে হয় তাকে। যদিও পরে জামিনে মুক্ত হন তিনি। এরপর ওই অভিযোগ খারিজের দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন যুবক। তার অভিযোগ, মিথ্যে মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। যুবকের মা পেশায় শিক্ষিকা, দাদা পেশায় চিকিৎসক, তাদেরকেও আগাম জামিন নিতে হয় এই মামলার জেরেই।
হাইকোর্টে মামলা উঠলে রাজ্যের আইনজীবী পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেন। সেখানেও বলা হয়, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রাপ্ত বয়স্ক দু’জনেরই সম্মতিতেই শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। এবং তার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এছাড়া অভিযোগকারীর আচরণ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। আদালত সূত্রে খবর, অভিযোগপত্রে যুবতী জানিয়েছিলেন ২০১৯–এ যুবকের সঙ্গে তার পরিচয়ের কথা। এদিকে গোপন জবানবন্দিতে কথা পাল্টে তিনি জানান ২০১৭ সালে তাদের আলাপ।
যুবতী আবার কখনও বলেছেন তিনি বাধ্য হয়ে পিল খেতেন, আবার ভিডিয়ো প্রকাশের ভয়ে তিনি সম্পর্ক রাখতে বাধ্য হতেন বলেও দাবি করেন। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তিনি আরও জানান, সম্পর্কে যাওয়ার পর তার মনে হয়েছিল, যুবক শারীরিক সম্পর্ক রাখতে বেশি আগ্রহী। বিয়ে করার আগ্রহ তেমন নেই। একাধিকবার ঘুরতে যাওয়ার কথাও স্বীকার করেন তিনি।
পুলিশের তদন্তে যা উঠে আসে তা হল, তরুণী নিজে বুঝেছিলেন যুবক বিয়েতে আগ্রহী না হয়েও শারীরিক সম্পর্ক রাখতে চান। তবে এই নিয়ে তার অপর বলপ্রয়োগ হয়নি। বরং নিজের ইচ্ছাতেই তিনিও সেই সম্পর্ক রাখতেন। পাশাপাশি আদালত পর্যবেক্ষণে জানায়, ধর্ষণের অভিযোগ আনার একমাস আগেই ওই যুবক যুবতীর বাবাকে একটি চিঠি যুবতীর উদ্ভট আচরণের পাশাপাশি তাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: শরীরে শান্তি নেই! ‘সপ্তাহে ২-১ দিন যদি…’! নওশাদের দাবি শুনে ‘হতভম্ব’ কারামন্ত্রী
আদালতের পর্যবেক্ষণ, দু’জনের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে খতিয়ে দেখে যুবতীকে ভয় দেখিয়ে বা জোর করে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করেন নি যুবক। এটা জলের মতো স্পষ্ট। তাদের গভীর প্রেমের প্রমাণ মিলেছে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকেই। অভিযুক্তর মোবাইল পরীক্ষা করেও কোনো কুরুচিকর ভিডিয়ো পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ।
আরও পড়ুন: ‘এবার আদালতকে পদক্ষেপ নিতে হবে..,’ কড়া পর্যবেক্ষণ বিচারপতির, কোন মামলায়?
এদিকে যুবককে হাইকোর্ট নির্দোষ বললেও এতদিনে চরম ক্ষতি হয়ে গিয়েছে যুবকের জীবনে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একটি চাকরির প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ওই যুবক। তবে এতদিনে চাকরির ফাইনাল পরীক্ষায় বসার জন্য প্রয়োজনীয় বয়সসীমা পেরিয়ে গিয়েছে তার। এদিকে আরও দু’টি জায়গায় নিজের যোগত্যায় চাকরি পেলেও ধর্ষণের অভিযোগে জেল খাটায় সেসবেরও সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। দোষ মুছলেও ভয়ানক অভিযোগের কালো ছায়া কি তার জীবন থেকে সরবে কোনোদিনও? প্রশ্ন যুবকের আইনজীবীদের।