বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যের বহুল আলোচিত ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল মামলার শুনানি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। দীর্ঘদিনের আইনি লড়াইয়ের পর, কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta High Court) উভয় পক্ষের বক্তব্য শেষ হয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র জবাব দাখিলের প্রক্রিয়া চলছে। এমন সময় বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর একটি মন্তব্য নতুন করে জল্পনার সৃষ্টি করেছে রাজ্যজুড়ে।
কোন পথে আদালতের (Calcutta High Court) রায়?
প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল, এই মামলায় পিটিশনারদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। কিন্তু শুনানির শেষ পর্যায়ে বিচারপতির রায়ে সেই ধারণাকে উল্টে গিয়েছে। বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এই মামলার মাধ্যমে মূল পিটিশনারদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই।
বিচারপতি উল্লেখ করেন, মামলার প্রধান প্রশ্ন হলো- বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ যে নির্দেশে ৩২,০০০ শিক্ষকের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেছিলেন, তা কি ডিভিশন বেঞ্চ বহাল রাখবে নাকি বাতিল করবে? অর্থাৎ, রায় মূলত দুটি সম্ভাবনার একটিতে গিয়ে দাঁড়াবে।
দুটি সম্ভাবনা সামনে-
- সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ বাতিল হলে: ৩২,০০০ শিক্ষকের চাকরি সুরক্ষিত থাকবে, তাঁরা তাঁদের পদে বহাল থাকবেন।
- সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল থাকলে: এই শিক্ষকদের চাকরি বাতিল হওয়া কার্যত নিশ্চিত।
রায়ের ফলাফল নির্ভর করছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের (Board) যুক্তি এবং দুর্নীতির প্রমাণের উপর। হাই কোর্টের (Calcutta High Court) বেঞ্চ শুরু থেকেই দুর্নীতির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। দুর্নীতির বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে সিবিআই রিপোর্টে। সিবিআই যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়ার একাধিক স্তরে দুর্নীতি, বেআইনি লেনদেন ও আর্থিক অনিয়মের কথা। শুধু প্রাথমিক স্তরে নয়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ, গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি নিয়োগেও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রাথমিক নিয়োগে সিবিআই রিপোর্টে যে তথ্য উঠে এসেছে তা হল –
- ৭৫২ জন প্রার্থীকে বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছিল।
- ২৬৯ জনের চাকরি বাতিল করা হয়েছে, তাঁদের মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
- ৯৪ জন প্রার্থী টেট (TET) না পাস করেই চাকরি পেয়েছেন।
তবে এই বেআইনি নিয়োগপ্রাপ্তদের সঙ্গে ৩২,০০০ শিক্ষকের মামলার পার্থক্য রয়েছে। কারণ ৩২,০০০ প্রার্থীর নিয়োগ হয়েছিল ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে, আর বেআইনি নিয়োগগুলির অনেকগুলি ঘটেছিল নভেম্বর মাসে।

আরও পড়ুনঃ জন্ম সনদ বিতরণে জালিয়াতি? কেএমসি-কে আক্রমণ শুভেন্দু অধিকারীর, আরটিআই ও লিখিত অভিযোগ জানালেন কমিশনকে
বিচারপতিরা এখন সমগ্র প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করছেন, দুর্নীতির গভীরতা ও প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা যাচাই করছেন। আদালত (Calcutta High Court) স্পষ্ট করে বলেছে, যারা নতুন করে মামলায় যুক্ত হয়ে সুবিধা পেতে চাইছেন, তাঁদের আবেদনও আর গ্রহণ করা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে এখন গোটা রাজ্যের নজর কলকাতা হাই কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের দিকে। আদালতের রায়ই ঠিক করবে, ৩২,০০০ শিক্ষক পদে নিয়োগ বহাল থাকবে, না কি বাতিল হবে।













