বাংলা হান্ট ডেস্কঃ প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ থেকে বদলি, সবকিছুর মূল দায়িত্ব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ বা ডিপিএসসি-র। কিন্তু আদৌ কি তাদের অস্তিত্ব আছে? সোমবার কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta High Court) উঠল সেই প্রশ্ন। বিচারপতির স্পষ্ট জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের পর থেকে পূর্ব মেদিনীপুরসহ বহু জেলাতেই বৈধভাবে কোনও ডিপিএসসি গঠন হয়নি। ফলে সচিবদের সিদ্ধান্ত কতটা আইনসঙ্গত তা নিয়েই এখন জোর বিতর্ক চলছে।
বদলির মামলায় আদালতের (Calcutta High Court) যুক্তি
পূর্ব মেদিনীপুরের এক শিক্ষিকা নীলাঞ্জনা মাইতি বদলির নির্দেশ নিয়ে হাই কোর্টে (Calcutta High Court) মামলা করেন। তাঁর অভিযোগ, সংসদ সচিব অবৈধভাবে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আদালতও জানায়, “ডিপিএসসি-র মেয়াদ শেষ হলে নতুন সদস্য নিয়োগ ও গেজেট বিজ্ঞপ্তি ছাড়া সংসদ কার্যকর হতে পারে না। সচিব কেবল কর্মচারী, তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী নন।” ফলে শিক্ষিকার বদলি অবৈধ ঘোষণা করে আগের স্কুলেই থাকার নির্দেশ দেন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ দাবি করে, ডিপিএসসি আসলে স্থায়ী কর্পোরেট বডি, সেখানে শুধুমাত্র সদস্যদের মধ্যে বদল হয়। ডিপিএসসি-র সদস্যদের মেয়াদ ৪ বছরের জন্য হয়। ফলে সদস্যদের মেয়াদ শেষ হলেও ডিপিএসসি-র কাজ চলতে থাকে। তাই সচিবের নির্দেশ আইনসম্মত। কিন্তু আদালত (Calcutta High Court) জানিয়ে দেয়, ২০১৫ সালের পর কোনও নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। এ অবস্থায় সচিব বদলির ক্ষমতা পান না। বিচারপতি জানান, “একটি ডিপিএসসি-র মেয়াদ শেষ হলেও, নতুন গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পুরানো অফিসই বহাল থাকবে। এটি অন্তর্বর্তিকালীন পদক্ষেপ। যদি সংসদকে স্থায়ী ধরা হয়, তবে কখনও নতুন নির্বাচন বা পুনর্গঠন হবে না, যা গণতান্ত্রিক কাঠামোর পরিপন্থী।”
আইনজীবীদের দাবি, “শেষবার ২০১১ সালে পূর্ব মেদিনীপুরে ডিপিএসসি গঠিত হয়েছিল, মেয়াদ শেষ হয় ২০১৫ সালে।” তারপর থেকে নতুনভাবে গঠন না হওয়ায় সমস্ত সিদ্ধান্ত প্রশ্নের মুখে। এমনকি ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলাতেও এই তত্ত্ব উত্থাপন করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা।
১৯৭৩ সালের পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা আইনে প্রতিটি জেলায় ডিপিএসসি থাকা বাধ্যতামূলক। শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, বেতন ও শিক্ষানীতি বাস্তবায়নসহ নানা দায়িত্ব এই সংস্থার। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নতুন গঠন না হওয়ায় গোটা ব্যবস্থার বৈধতা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। হাই কোর্টের (Calcutta High Court) এই পর্যবেক্ষণের পর রাজ্যের শিক্ষা প্রশাসন আরও বড় আইনি জটিলতার মুখে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।