বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সিবিআই তদন্তে অসঙ্গতি, চার্জশিটে তথ্যের অভাব, এবং সাক্ষীদের বিরোধিতা, সব মিলিয়ে অভিজিৎ সরকার খুন মামলায় গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) এজলাসে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। এই মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা পরেশ পাল এবং রত্না সরকারের অন্তর্বর্তী জামিন সংক্রান্ত শুনানিতে প্রশ্নের মুখে পড়ে সিবিআই।
বিচারপতির প্রশ্ন: চার্জশিটে অতিরিক্ত তথ্য নেই কেন?
সিবিআই জানিয়েছে, তারা ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর খুনের ঘটনার ভিত্তিতে তদন্ত করে মাত্র এক মাসের মধ্যেই চার্জশিট জমা দেয়। তদন্তকারী আধিকারিকের দাবি, “আমরা সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছি।” কিন্তু বিচারপতির মন্তব্য ছিল, “ঘটনার দিনই সাক্ষ্যগ্রহণ, সেই দিনই নোটিস? অতিরিক্ত তথ্য কোথায়? পাঁচ বছরে কী কী নতুন তথ্য এসেছে, স্পষ্ট করে বলুন।”
পার্টি অফিসে কী হয়েছিল? নাম উল্লেখ ছিল কি?
অভিজিৎ সরকারের পরিবারের আইনজীবী জানান, ২ মে ও ৬ মে বিশ্বজিৎ সরকার সিপিকে যে চিঠি দেন, তাতে লেখা আছে, তাঁরা দলীয় অফিসে ছিলেন এবং পরে প্রাণ বাঁচাতে অন্যত্র আশ্রয় নেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “রত্না সরকারের বয়ান কি আদৌ নেওয়া হয়েছিল?”
জবাবে সিবিআই-এর পক্ষে আইনজীবী বলেন, “ভিকটিমের বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় রয়েছে। হোমগার্ড দীপঙ্কর দেবনাথ জানিয়েছেন, রত্না সরকারের নির্দেশেই তিনি রক্তের দাগ মুছেছিলেন।” তবুও বিচারপতির প্রশ্ন, “পার্টি অফিসে কী হয়েছিল, অভিযুক্তদের নাম কি চার্জশিটে স্পষ্টভাবে লেখা আছে?” বিচারপতির মত, প্রাথমিক চার্জশিটের পরেও তদন্ত এগিয়ে নেওয়া যেত।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র আক্রমণ
এই মামলায় অভিযুক্ত পরেশ পালের পক্ষে সওয়াল করেন তৃণমূল সাংসদ ও আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সিবিআইকে আক্রমণ করে বলেন, “চার বছর পরে চার্জশিট! সিবিআই কি রামকৃষ্ণ মিশন, না কালীঘাটের মন্দির? শুধু গ্রেফতার করাটাই কি উদ্দেশ্য?” তাঁর আরও অভিযোগ, “রত্না সরকারের বিরুদ্ধে ব্ল্যাঙ্ক পেপারে সই করানোর অভিযোগ থাকলেও, কোনও প্রমাণ লোপাট হয়নি। এখনও আমরা ট্রায়ালের পর্যায়ে পৌঁছইনি। ভিকটিমের ভাইয়ের ১৬৪ ধারায় মামন্থা ঘোষ নামে একজন রক্ত মুছেছেন বলেও উল্লেখ আছে।”
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি বলেন, “এই মামলায় তিন রকম বয়ান রয়েছে। আদালতকে (Calcutta High Court) সমস্ত দিক থেকেই বিষয়টি বিচার করতে হবে।” শনিবার অন্তর্বর্তী জামিনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। আগামী সোমবার ফের এই মামলার শুনানি হবে বলে জানানো হয়েছে।