বাংলাহান্ট ডেস্ক : কেনই যে ‘কেষ্টাদা’কে ফোন করেছিলেন! প্রার্থী হওয়া তো হলইনা, উল্টে আবার এইসব উটকো ঝামেলা। এখন নিশ্চয়ই এইসব ভেবে হাত কামড়াচ্ছেন দুবরাজপুরের গৃহবধু রুবিনা বিবি। রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগের তদন্তে নেমে এ বার এক গৃহবধূকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বীরভূমের দুবরাজপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই গৃহবধূ। সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি জানান, পৌরভোটের টিকিট চাওয়াই কাল হল তাঁর ! রুবিনা বলেন, বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কাছে টিকিট চেয়ে একবার ফোন করেছিলেন তিনি ৷ আর সেই সূত্র ধরেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় সিবিআই।
সোমবার দুর্গাপুরে সিবিআই-এর অস্থায়ী দফতরে আধিকারিকদের কাছে হাজিরা দিতে আসেন রুবিনা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দাদা ৷ সাংবাদিকদের তিনি জানান, 2021 সালে প্রথমবার অনুব্রত মণ্ডলকে ফোন করেছিলেন তিনি ৷ সেই সময় ‘কেষ্টদা’র সঙ্গে তাঁর কথাও হয়েছিল ৷ তৃণমূল জেলা সভাপতিকে রুবিনা জানান, পরের পৌর নির্বাচনে তিনি দুবরাজপুর থেকে শাসক দলের প্রার্থী হতে চান ৷ জবাবে অনুব্রত তাঁকে বলেন, মন দিয়ে ওয়ার্ডের কাজ করতে হবে ৷ সাধারণ মানুষ যদি তাঁকে প্রার্থী হিসাবে চায়, তাহলে অবশ্যই পরেরবার ভোটের টিকিট পাবেন রুবিনা ৷ কেষ্টদার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন বলেই দাবি করেন রুবিনা। তিনি নিজের ওয়ার্ডে মানুষের কাজে মন দেন ৷ কিন্তু, তারপরও লাভের লাভ কিছুই হয়না। নির্বাচনের টিকিট তিনি পাননি। অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশেই অন্য এক মহিলা টিকিট পান। রাগে দুঃখে নির্দল প্রার্থী হিসাবেই পৌরসভা নির্বাচনে লড়াই করেন তিনি। কিন্তু লড়েও হেরে যান রুবিনা ৷
রুবিনার বলেন, তিনি একজন অত্যন্ত সাধারণ গৃহবধূ। কিন্তু, স্বপ্ন দেখতেন একদিন দুবরাজপুরের কাউন্সিলর হবেন। আর সেই স্বপ্ন সফল করতেই অনুব্রতবাবুর মোবাইলে বারকয়েক ফোন করেন বলেই জানান তিনি। তবে, অনুব্রতর মোবাইলে ফোন করলেও তাঁর সঙ্গে রুবিনার খুব একটা কথা হত না। বেশিরভাগ সময়েই অনুব্রতর কোনও সহযোগী ফোন ধরতেন। এ দিকে, রুবিনা যে নম্বর থেকে অনুব্রতকে ফোন করতেন, সেই সিম কার্ডটি নেওয়া হয় রুবিনার দাদার নামে। দিন কয়েক আগে রুবিনার দাদার সঙ্গে সিবিআই যোগাযোগ করে। সিবিআই আধিকারিকরা জানান অনুব্রতর সঙ্গে তাঁর কী সম্পর্ক রয়েছে? রুবিনার দাদা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের জানান, তাঁর সঙ্গে অনুব্রতর কোনও সম্পর্কই নেই। আর যে মোবাইল নম্বরের কথা জানতে চাওয়া হচ্ছে, সেটি তাঁর নামে থাকলেও সেই নম্বরটি ব্যবহার করেন তাঁর বোন রুবিনা।
তারপরই সিবিআই-এর নির্দেশ দেন সোমবার রুবিনা বিবি এবং তাঁর দাদা যেন দুর্গাপুরে সিবিআই-এর অস্থায়ী দফতরে এসে দেখা করে যান৷ গোটা ঘটনায় রীতিমতো বিরক্ত হয়েছেন ওই গৃহবধূ। রুবিনার দাবি, কাউন্সিলর হওয়ার স্বপ্ন দেখাটাই ভুল হয়েছে তাঁর। ভোটের টিকিট পাওয়ার জন্য তিনি যদি অনুব্রতকে ফোন না করতেন, তাহলে আজ তাঁকে সিবিআই ডাকাডাকি করতো না। প্রসঙ্গত, বর্ধমানের কেতুগ্রামের এক টোটো চালক অজয় দাসকেও তলব করেছে সিবিআই। জানা যাচ্ছে ওই টোটো চালক নাকি মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন কারণে অনুব্রত মণ্ডল সহ একাধিক তৃণমূল নেতাকে ফোন করতেন।