বাংলাহান্ট ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর শুল্কনীতির জেরে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত (India)-চিন সম্পর্কের মধ্যে কিছুটা উষ্ণতা ফিরেছে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে। তবে বেজিং সরকারের অপ্রত্যাশিত কার্যকলাপ আবারও উদ্বেগ তৈরি করছে নয়াদিল্লির অন্দরে। কারণ, লাদাখ সীমান্তে ফের চিনা সেনার নড়াচড়া এবং নতুন সামরিক পরিকাঠামো গড়ে ওঠার বিষয়টি সামনে এসেছে। সর্বশেষ স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গিয়েছে, প্যাংগং হ্রদের পূর্ব তীরে ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র ১১০ কিলোমিটার দূরে দ্রুতগতিতে তৈরি হচ্ছে চিনের একটি নতুন বিমান প্রতিরক্ষা ঘাঁটি।
ভারতের (India) নাকের ডগায় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি তৈরি চিনের
মার্কিন গবেষণা সংস্থা অলসোর্স অ্যানালিসিস (AllSource Analysis বা ASA)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত (India) সীমান্তের অদূরে নির্মিত এই ঘাঁটি একটি পূর্ণাঙ্গ এয়ার ডিফেন্স কমপ্লেক্সে পরিণত হচ্ছে, যেখানে রয়েছে কমান্ড সেন্টার, সেনা ব্যারাক, অস্ত্রাগার, রাডার ঘাঁটি, এবং যানবাহন রাখার জন্য বিশাল হ্যাঙ্গার। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এই ঘাঁটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ক্ষেত্র। সেখানে এমন বিশেষ ছাদযুক্ত কাঠামো তৈরি হয়েছে, যেখান থেকে ট্রান্সপোর্টার ইরেক্টর লঞ্চার (TEL) যান ব্যবহার করে ছাদ সরিয়ে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা সম্ভব।
আরও পড়ুন:অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রয়েছে উভয়পক্ষের সহমত! আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে মিলল বড় আপডেট
ASA জানিয়েছে, এই সুরক্ষিত ঘাঁটিতে সম্ভবত চিনের দীর্ঘপাল্লার HQ-9 সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল (SAM) সিস্টেম স্থাপন করা হচ্ছে। এই HQ-9 সিস্টেম চিনের অন্যতম শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা অস্ত্র, যা ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে টার্গেট ধ্বংস করতে সক্ষম। এর পরিধি এবং সক্ষমতা এমন যে, এটি লাদাখ অঞ্চলের ভারতীয় (India) বিমানঘাঁটি ও সামরিক স্থাপনাগুলিকেও নজরে রাখতে পারে বলে আশঙ্কা গোয়েন্দাদের।
ASA-র গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, এই ঘাঁটির মতো আরেকটি প্রতিরূপ ঘাঁটি তৈরি হচ্ছে তিব্বতের গার কাউন্টিতে। সেটি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) থেকে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দূরে এবং ভারতের (India) সম্প্রতি আধুনিকীকৃত নিয়োমা বিমানঘাঁটির একেবারে বিপরীতে। ২৯ সেপ্টেম্বরের স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায়, গার কাউন্টির কয়েকটি উৎক্ষেপণ শেডের ছাদ আংশিক খোলা, যার নিচে স্থাপন করা হয়েছে লঞ্চার। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ঘাঁটিটি ইতিমধ্যেই সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে বা খুব শিগগিরই কার্যকর হতে চলেছে।

আরও পড়ুন: শোকের ছায়া বলিউডে, দীর্ঘ রোগভোগের পর প্রয়াত অভিনেতা সতীশ শাহ
ভারত (India)-তিব্বত সীমান্তে ঢাকনাযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের এমন ছবি এই প্রথম ধরা পড়ল। যদিও এর আগে দক্ষিণ চিন সাগরের বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জে বেজিং একই রকম গোপন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করেছিল। প্যাংগং হ্রদের কাছে এই দ্বিতীয় ঘাঁটির নির্মাণকাজ প্রথম নজরে আসে চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষদিকে। তবে তখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি যে কাঠামোগুলি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্যই তৈরি হচ্ছে কিনা। এখন সেই সন্দেহ প্রায় নিশ্চিত হয়ে উঠেছে।
ভারতের (India) নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, চিনের এই পদক্ষেপ কেবল সামরিক প্রস্তুতির অংশ নয়, বরং এটি এক ধরনের কৌশলগত বার্তাও। একদিকে যেখানে বাণিজ্যিকভাবে ভারত ও চিন কিছুটা ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, অন্যদিকে সীমান্তে এভাবে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করা দুই দেশের মধ্যেকার আস্থার পরিবেশকে ফের নড়বড়ে করে দিতে পারে।













