বাংলা হান্ট ডেস্ক: বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চিন (China) সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এমতাবস্থায়, সেই দেশের রপ্তানি ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি রিয়েল এস্টেট সেক্টর মারাত্মক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়াও বেকারত্ব চরমে রয়েছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশ থেকে তাদের অর্থ তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যস্ত রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন গ্লোবাল কোম্পানিগুলি চিন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কয়েকটি দেশও চিনের ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছে। এদিকে, এই চ্যালেঞ্জগুলি চিনের সমস্ত অহঙ্কার দূর করেছে।
ইতিমধ্যেই চিনের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক পিপলস ব্যাঙ্ক অফ চায়নার (PBOC) গভর্নর এবং দেশের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেটর প্যান গংশেং (Pan Gongsheng) বেশ কয়েকটি গ্লোবাল কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে একটি বৈঠক করেছেন। যেখানে তিনি বলেছেন যে, চিন তার ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রি খুলতে প্রস্তুত। এছাড়াও, বিদেশি কোম্পানিগুলির জন্য আরও ভালো পরিবেশ তৈরি করা হবে। ওই বৈঠকে জেপি মরগান, টেসলা, এইচএসবিসি, ডয়েচে ব্যাঙ্ক, জাপানের এমএফইউজি ব্যাঙ্ক, জার্মান কোম্পানি বিএএসএফ, কমোডিটিজ ট্রেডার Trafigura সহ আরও বেশ কয়েকটি বড় সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার এটি ঘটেছে: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, চিনে অভ্যন্তরীণ চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া হাউসিং সেক্টরও সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। যা চিনের পুরো অর্থনীতিকে ডুবিয়ে দিতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এছাড়াও, চিন সরকার অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পরিবর্তে জাতীয় নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমেরিকাসহ অন্যান্য পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে চিনের উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়ছে। এইসব কারণে সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও কোম্পানিগুলির চিন্তাও বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে চিনে এফডিআই কমেছে ৫.১ শতাংশ। এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে সেদেশের ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট লায়াবিলিটিজ মাত্র ৪.৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এটি এক বছর আগের তুলনায় ৮৭ শতাংশ কম। শুধু তাই নয়, ১৯৯৮ সালের পর যেকোনো ত্রৈমাসিকের ভিত্তিতে এটি সর্বনিম্ন পরিমাণ।
আরও পড়ুন: ভবিষ্যৎ হবে সুরক্ষিত! এই ফর্মুলা মেনে বিনিয়োগ করলেই ১২ বছর পর অ্যাকাউন্টে আসবে ১ কোটি
এমতাবস্থায়, সম্প্রতি আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স একটি বিজনেস ক্লাইমেট সার্ভে প্রকাশ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪০ শতাংশ কোম্পানি জানিয়েছে, চিনে বিনিয়োগের যে পরিকল্পনা তারা করেছিল এখন অন্য দেশে সেটি বিনিয়োগ করছে। মাত্র ৫২ শতাংশ কোম্পানি চিনে পাঁচ বছরের ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ইতিবাচক মতামত প্রকাশ করেছে। যেটি এই সার্ভের ইতিহাসে সবথেকে কম। গত মাসে, মার্কিন কমার্স সেক্রেটারি জিনা রাইমন্ডো বলেছিলেন যে, তাঁর চিন সফরের সময়ে কিছু আমেরিকান কোম্পানি তাঁকে বলেছিল যে এই দেশ আর বিনিয়োগের যোগ্য নেই।
আরও পড়ুন: দূতাবাস নয়, এই মন্দিরেই ভগবান বানিয়ে দেন আমেরিকার ভিসা! নিতে আসেন লক্ষ লক্ষ ভক্ত
কিভাবে ঘটবে পরিবর্তন: এই প্রসঙ্গে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের একজন মুখপাত্র বলেছেন যে, চিন এখনও বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের গন্তব্য। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের বৈঠকে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলি চিনকে বলেছে, দেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। এমতাবস্থায়, প্যান গংশেং কোম্পানিগুলিকে বলেন, তাঁর দেশ নীতি পরিবর্তন করবে এবং বাজার অনুযায়ী নীতি তৈরি করা হবে। এছাড়াও, লিগেল এবং ইন্টারন্যাশনাল ফার্স্ট ক্লাস বিজনেস এনভায়রনমেন্ট তৈরি করা হবে। তিনি আরও বলেন যে, অর্থনীতিকে ভালোভাবে উন্মুক্ত করতে রেগুলেটররা একটি ভালো ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেজ ইন্ডাস্ট্রি তৈরির দিকে কাজ করবে।