দিন দিন বাড়ছে বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের পরিমাণ, নবদম্পতিদের ফোন করে চিন সরকারের প্রশ্ন, ‘বাচ্চা কবে হবে?’

বাংলাহান্ট ডেস্ক: জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘এক সন্তান নীতি’ চালু করেছিল চিন। এর ফলে ক্রমশ কমেছে সে দেশের জনসংখ্যা। এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ছিল চিন। সেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে রাশ টানতেই এই নীতি চালু করেছিল চিন প্রশাসন। তবে অদূর ভবিষ্যতে এই ‘এক সন্তান নীতি’র নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সে দেশের অর্থনীতিতে।

এমনকি এই নীতির ফলে নতুন প্রজন্ম তৈরির হারও থমকে গিয়েছে (China population problem)। ফলে বৃদ্ধ-বৃদ্ধায় ভরে যাচ্ছে দেশ। এই নিয়ে চিন্তার শেষ নেই ড্রাগনের দেশের সরকারের। তাই নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে এক অভিনব পন্থার অবলম্বন করেছে শি জিনপিংয়ের সরকার। চিনের নবদম্পতিদের এবার বার বার প্রশ্ন করা হচ্ছে, কবে তাঁরা সন্তান ধারণ করবেন?

সম্প্রতি সদ্যবিবাহিত এক মহিলা জানিয়েছেন, তিনি গর্ভবতী কি না তা জানতে চাওয়া হয় স্থানীয় প্রশাসনের তরফে। এই মর্মে তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। সেই অভিজ্ঞতা তিনি শেয়ার করে নিয়েছেন নেট মাধ্যমে। মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে তাঁর পোস্টটি। তাঁর পোস্টের সঙ্গে সম্মতি জানিয়ে বেশ কয়েক হাজার নেটনাগরিক জানিয়েছেন, একই ঘটনা ঘটেছে তাঁদের সঙ্গেও।

অর্থাৎ দেশের কয়েক হাজার নাগরিককেই ফোন করে জানতে চাওয়া হয়েছে তাঁরা কবে সন্তান ধারণের কথা চিন্তা করছেন। চিন এমনিতেই এমন একটি দেশ হিসেবে পরিচিত যারা খুব রক্ষণশীল। দেশের অন্তরে ঠিক কী ঘটছে, তা সকলের সামনে আসতে দিতে নারাজ তারা।

এই দেশের শাসককে ঘিরে বার বার উঠেছে নাগরিকদের স্বাধীনতা ও অধিকারের উপর হস্তক্ষেপের অভিযোগ। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। ওই সদ্যবিবাহিত মহিলার পোস্ট ইন্টারনেটে ভাইরাল হতেই সেই পোস্ট মুছে ফেলা হয় চিন সরকারের তরফে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, টুইটারের ধাঁচে তৈরি চিনা মাইক্রোব্লগিং সাইট ‘ওয়েইবো’-তে এই বিষয়ে আলোচনা চলছে।

সেখানে ‘lost shuyushou’ নামের এক ব্যবহারকারীর দাবি, নানজিং শহরে তাঁর এক সহকর্মীর কাছেও প্রশাসনের তরফে এমন ফোন গিয়েছে। চিনের নারীস্বাস্থ্য দফতর থেকে আসা ওই ফোনে বলা হয়, “সরকার চাইছে, বিয়ের এক বছরের মধ্যেই মহিলারা গর্ভধারণ করুন। তিন মাস অন্তর এই বিষয়ে ফোন করে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের।” 

অন্য একজন মহিলা জানিয়েছেন, গত আগস্টে তাঁর বিয়ে হয়েছে। এরমধ্যেই তাঁকে দু’বার ফোন করেছেস্থানীয় প্রশাসন। ফোনের ওপারে থাকা আধিকারিক বলেন, “আপনি তো বিবাহিত। তাহলে সন্তানধারণের জন্য এখনও প্রস্তুত না হওয়ার কারণ কী? এবার সময় করে পরিকল্পনা করে ফেলুন।” এমনই ফোন গিয়েছে আরও হাজার হাজার চিনা নাগরিকের কাছে। উল্লেখ্য, চিন এখন নতুন করে তাদের দেশের জনসংখ্যা বাড়াতে চাইছে।

এ বিষয়ে শুধু সরকারই নয়, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও চাইছে নতুন প্রজন্ম বৃদ্ধি পাক দেশে। বেসরকারি সংস্থাগুলি তাদের কর্মীদের এই বিষয়ে উৎসাহ দিতে নতুন নতুন অফার দেওয়া শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, বিপুল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে ১৯৮০ সালে উদ্যোগ নেয় চিনা সরকার। জন্মনিয়ন্ত্রণে দেশের নাগরিকদের উৎসাহ দিতে বিভিন্ন প্রচার করা হয় সরকারের তরফে। একইসঙ্গে চালু করা হয় ‘এক সন্তান’ নীতি।

অর্থাৎ প্রতি দম্পতি কেবল একটিই সন্তান ধারণ করতে পারবেন। এর ফলে বর্তমানে সেখানে নতুন এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। বেড়েই চলেছে প্রবীণ নাগরিকদের সংখ্যা। ২০১৬ সালে এক সন্তান নীতি থেকে সরে এসেছে সরকার। তবু এই সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই গত ছ’ বছর ধরে একের বেশি সন্তান ধারণের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে নাগরিকদের।


Subhraroop

সম্পর্কিত খবর