বিড়ালের পাচনতন্ত্রেই লুকিয়ে বিশ্বের দামি কফির রহস্য! ভারতীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণা স্বীকৃতি পেল “নেচার” পত্রিকায়

Published on:

Published on:

Civet Coffee research by Indian scientists got worldwide recognition.

বাংলাহান্ট ডেস্ক: বিশ্বের সবচেয়ে দামী কফির (Civet Coffee) উৎস এক বিশেষ বিড়ালের মল! শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও বাস্তবে তা-ই। এই কফির নাম সিভেট কফি বা কোপি লুয়াক, যার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি এক হাজার ডলারেরও বেশি—ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৮০,০০০ টাকার সমান। শুধু দাম নয়, উৎপাদন প্রক্রিয়া ও স্বাদের বৈশিষ্ট্যেই ব্যতিক্রমী এই কফি। দক্ষিণ এশিয়া এবং আমেরিকায় বিশেষ জনপ্রিয় এই কফি তৈরির পেছনে কাজ করে এক অদ্ভুত প্রাকৃতিক জৈবিক প্রক্রিয়া।

বিশ্বের দামি কফি (Civet Coffee) নিয়ে গবেষণায় আন্তর্জাতিক খ্যাতি ভারতীয় গবেষকদের

এশিয়ান পাম সিভেট নামে এক বিরল বিড়াল প্রজাতি, যা ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বনাঞ্চলে পাওয়া যায়, পাকা কফি ফল খেতে ভালোবাসে। ফলটি হজমের সময় সিভেটের পাচনতন্ত্রে থাকা বিশেষ এনজাইম ও মাইক্রোব কফি বীজকে ভিন্নরূপে প্রক্রিয়াকরণ করে। পরবর্তীতে সেই বীজ সিভেটের মল থেকে সংগ্রহ করে বিশেষ পদ্ধতিতে ধুয়ে ও পরিশোধন করে তৈরি হয় কোপি লুয়াক (Civet Coffee)। এভাবেই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক জৈব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় বিশ্বের সবচেয়ে দামী এবং রহস্যময় কফি।

আরও পড়ুন: Jio-Airtel-এর উড়ল ঘুম! BSNL-এর এই দুই প্ল্যানে দুর্দান্ত অফার, কম খরচে মিলছে বেশি ভ্যালিডিটি

বিশ্বের সবচেয়ে দামী কফি (Civet Coffee) নিয়ে যেমন কৌতূহল, তেমনই রহস্যও অসংখ্য। সেই রহস্যে এবার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ যুক্ত করলেন বাঙালি গবেষক রমিত মিত্রসহ ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। কেরালা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির গবেষক দল—রমিত মিত্র, থমাস জোসে, পি. আবিরাম কৃষ্ণন, এম. হরিরাভীন্দ্র এবং ড. পি. এ. সিনু—সম্প্রতি এমন এক গবেষণা প্রকাশ করেছেন, যা ঘিরে দুনিয়া জুড়ে আলোড়ন ।

গবেষণা এলাকা পশ্চিমঘাট জীববৈচিত্র্য অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত, যেখানে তিন প্রজাতির সিভেট—এশিয়ান পাম সিভেট, ব্রাউন পাম সিভেট এবং মালাবার সিভেট—দেখা যায়। ড. সিনু জানান, এই গবেষণাতে ব্যবহৃত নমুনা প্রধানত IUCN তালিকায় ‘Least Concerned’ বা কম ঝুঁকিপূর্ণ এশিয়ান পাম সিভেট (Civet Coffee) থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকি দুই প্রজাতি তুলনামূলকভাবে বিরল। শুধু দামি কফির উৎসই নয়, বনজ খাদ্য খেয়ে বীজ ছড়িয়ে এই প্রাণীরা বনজ বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

Civet Coffee research by Indian scientists got worldwide recognition.

আরও পড়ুন:দেখেশুনে করুন প্রয়োজনীয় কাজ! নভেম্বরে ১১ দিন বন্ধ থাকবে ব্যাঙ্ক! দুর্ভোগ এড়াতে জানুন ছুটির তালিকা

গবেষণার ফল বলছে, সাধারণ রোবাস্তা কফির তুলনায় সিভেট কফিতে (Civet Coffee) ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফ্যাটি অ্যাসিড মিথাইল এস্টারের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যা কফিকে দেয় এক বিশেষ দুগ্ধজাত সুগন্ধ এবং মসৃণ স্বাদ। এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সিভেটের পাকস্থলীতে থাকা বিশেষ মাইক্রোব গ্লুকানোব্যাক্টার, যা কফির রসায়নকে নতুন মাত্রা দেয়। যদিও প্রোটিন ও ক্যাফেইনের ক্ষেত্রে খুব বেশি তারতম্য দেখা যায় না, কিন্তু স্বাদের মূল পার্থক্য এই জৈব রূপান্তরেই নিহিত। গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, রোস্টিংয়ের তাপমাত্রা ও প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত স্বাদে প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে সিভেট কফির (Civet Coffee) জনপ্রিয়তার আড়ালে রয়েছে নৈতিক উদ্বেগও। বহু দেশে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য সিভেট বিড়ালকে খাঁচায় বন্দি করে জোর করে কফি ফল খাওয়ানো হয়, যা গুরুতর প্রাণী নির্যাতন। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, প্রকৃত সিভেট কফি সংগ্রহ হয় বন্য সিভেটের মল থেকে, আর এই শিল্পে প্রতারণা ও প্রাণী নির্যাতন রোধে ক্রেতাদের সচেতন হওয়া জরুরি। কফি প্রেমীদের কাছে রহস্যময় এই পানীয় যেমন বিলাসের প্রতীক, তেমনই প্রকৃতি ও বিজ্ঞানের এক অনন্য মিশেল। তবে প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করতে এবং প্রকৃতি রক্ষায় দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন গবেষকরা।