প্রচণ্ড দাবদাহের জের, বেড়ে গেল গরমের ছুটি! স্কুল খোলার দিনক্ষণ আজই জানাবে শিক্ষা দফতর

বাংলাহান্ট ডেস্ক : বিগত প্রায় দুবছর অতিমারির কারনে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন। ২০২২-এ ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে এসেছে অতিমারির প্রকোপ। কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শুরু হয়েছে স্বাভাবিক পড়াশোনা। কিন্তু এরই মধ্যে সরকার দীর্ঘকালীন গরমের ছুটি ঘোষণা করে। যা চলছে এখনও। এই নিয়ে উঠে এসেছে বিতর্কও। কিন্তু জানা যাচ্ছে আরও নাকি বাড়তে চলেছে গ্রীষ্মের ছুটি।

সম্পুর্ন সরকারি, সরকার দ্বারা পোষিত এবং আংশিক সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে গরমের ছুটি আরও ১০ দিন বাড়তে পারে বলেই খবরে প্রকাশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে আলোচনা করেন। তারপরেই পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা দফতর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে চলেছে বলে জানা যাচ্ছে। এত দিন ছুটি ঘোষিত হয়েছিল ১৫ জুন পর্যন্ত। আরও ১০ দিন বাড়ানো হলে প্রায় গোটা জুন মাসই ছুটির আওতায় এসে যাবে।

অতিমারিতে বছর দুয়েক স্কুল বন্ধ থাকার পরেও এই বছর গরমের ছুটি এগিয়ে আনা এবং তার দৈর্ঘ্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রাথমিক ভাবে প্রচুর বিতর্ক সামনপ আসে। এমনকি ছুটি কমানোর দাবিও উঠে আসে। তারপরও ছুটি বাড়ানোর সম্ভাবনার কথা শুনেই বিভিন্ন শিক্ষা মহল থেকে ছুটি বাড়ানোর যুক্তি নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠছে। এমনকি সকালে স্কুল করারও দাবি উঠছে।

জানা যাচ্ছে, রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে দণ্ড মহোৎসবে প্রচণ্ড গরমে প্রাণহানি এবং অনেকের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনার পরেই মুখ্যমন্ত্রী স্কুলের বাচ্চাদের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে দেন। তিনি মনে করেন এমন ভয়াবহ গরম চলতে থাকলে স্কুলপড়ুয়ারা খুব সমস্যায় পড়বে। তার পরেই তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। বর্ষা উত্তরবঙ্গে পৌঁছে গেলেও দক্ষিণবঙ্গে এখনও তার প্রভাব পরেনি। দক্ষিণবঙ্গে অস্বস্তিকর আবহাওয়া চলছেই। এর মধ্যে বর্ষা এসে পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে গেলে গরমের ছুটি কমিয়ে স্কুল খোলার সিদ্ধান্তও নিতে পারে বলে খবর।

শুধু পানিহাটির ঘটনাই নয়। জানা যাচ্ছে, দিন পাঁচেক আগে আলিপুরদুয়ারে প্যারেড গ্রাউন্ডে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় মা-বাবার সঙ্গে এসেছিল বছর এগারোর মুসকান। প্রবল গরমে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী ওই কিশোরীকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে নিজেই তার পরিচর্যা করেন। তার মুখ মুছিয়ে জল খাইয়ে দেন। পরে মেয়েটিকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আলিপুরদুয়ারের গরমের মধ্যে ছাত্রীর অসুস্থ হওয়ার ঘটনাও মুখ্যমন্ত্রীকে যথেষ্ট চিন্তায় ফেলেছিল।

এপ্রিলের শেষে প্রবল গরমে গ্রীষ্মের ছুটি ১৫ মে থেকে এগিয়ে নিয়ে এসে ২ মে থেকে করা হয়। ছুটি দেওয়া হয় টানা ৪৫ দিনের। এত লম্বা ছুটির বিরোধিতাও করে অনেক শিক্ষক সংগঠন। তাদের বক্তব্য, করোনার কারনে প্রায় দু’বছর ব্যাহত হয়েছে স্কুলে-কলেজের পঠনপাঠন। অনলাইনে পড়াশোনারও সুযোগ পেয়েছে খুব কম সংখ্যক পড়ুয়া। এই অবস্থায় আবার ৪৫ দিন গরমের ছুটি দিলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষতি হবে। সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘করোনার সময় দীর্ঘকালীন বন্ধ পড়াশোনা, তার পরে আবার ৪৫ দিনের গরমের ছুটি। পড়াশোনার সঙ্গে বহু পড়ুয়াই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তাদের দ্রুত স্কুলে আনতে হবে।’

নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইনের বলেন, ‘গরমের ছুটি বাড়লে ছাত্রছাত্রীরা আবার পড়াশুনা থেকে বিরত থাকবে। ওদের প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়ন এখনও নেওয়া হয়নি। আবার ছুটি বাড়ালে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। দরকার হলে সকালে পঠনপাঠন শুরু হোক।’


Sudipto

সম্পর্কিত খবর