বাংলা হান্ট ডেস্ক: বিহার বিধানসভা নির্বাচনে (Bihar Assembly Election 2025) এনডিএ ঝড়ে রীতিমতো ধরাশায়ী মহাজোট—এমনই ছবি দেখা গিয়েছে সকাল থেকেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মহাগঠবন্ধনের দুর্বলতার অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে কংগ্রেসের হতাশাজনক ফলাফল। প্রবণতা বলছে, কংগ্রেস মাত্র ১০টি আসনে লিড করছে এবং আগের নির্বাচনের তুলনায় ৯টি আসন হারাতে পারে। ২০২০ সালে কংগ্রেস ৭০টি আসনে লড়ে ১৯টি জিতেছিল। এবার দল ৬১ জন প্রার্থী দিলেও ১০টি আসনে লিড মানে স্ট্রাইক রেট ২০ শতাংশেরও কম। ফলে বেশি ও “পছন্দের” আসনে লড়াইয়ের সিদ্ধান্তও ফলপ্রসূ হয়নি বলে মনে করা হচ্ছে, যদিও চূড়ান্ত ফল আসতে এখনও সময় রয়েছে।
বিহার বিধানসভা নির্বাচনে (Bihar Assembly Election 2025) মুখ থুবড়ে পড়ল কংগ্রেস:
গত নির্বাচনের (Bihar Assembly Election 2025) পরিসংখ্যানও কংগ্রেসের দুর্বলতার প্রমাণ দেয়। মহাগঠবন্ধনে সবচেয়ে বেশি আসনে লড়াই করেও ২০২০ সালে কংগ্রেসের স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ২৭ শতাংশ—যা বাম দল ও আরজেডি–র তুলনায় অনেক কম। কংগ্রেসের এই দুর্বল পারফরম্যান্স দীর্ঘদিন ধরেই আরজেডি নেতৃত্ব, বিশেষত তেজস্বী ও লালু যাদবের জন্য চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:জনতাই শেষ কথা! বিহারের নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করলেন মহিলা ভোটাররা
নির্বাচনের (Bihar Assembly Election 2025) আগমুহূর্তেও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের আচরণ মহাগঠবন্ধনের ক্ষতি করেছে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত। ভোটার অধিকার যাত্রার সময় রাহুল গান্ধী খুব সক্রিয় ছিলেন এবং SIR–এর মতো ইস্যুতে এনডিএ–র বিরুদ্ধে কিছুটা পর্যন্ত জনমত গড়েছিলেন। কিন্তু যাত্রার পর তিনি কার্যত নীরব হয়ে যান। তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করতেও কংগ্রেস বারবার দেরি করে, এবং এই নীরবতা জোটের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। পরে মহাগঠবন্ধনের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনের পোস্টারে যেখানে তেজস্বীর ছবি ছিল প্রধান হয়ে, রাহুল গান্ধী সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকায় নানা জল্পনা বাড়ে।
অন্যদিকে আসনভিত্তিক প্রবণতা বলছে, কংগ্রেসের কিছু প্রার্থী ভালো লড়াই করছেন। বাল্মীকিনগরে কংগ্রেসের সুরেন্দ্র প্রসাদ ৪২৬৭২ (+৮৯৮) ভোটে এগিয়ে, পিছনে জেডিইউ–র ধীরেন্দ্র প্রতাপ সিংহ ৪১৭৭৪ (-৮৯৮)। কিশনগঞ্জে কংগ্রেসের এম. ডি. কামরুল হোদা বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে ৪৩৯৮১ (+১০৪৯৭) ভোটে। মানিহারিতে মনোহর প্রসাদ সিংহ ৪৫৮৮২ (+৭৩২২) ভোটে এগিয়ে, জেডিইউ–র শম্ভু সুমন পিছিয়ে। বেগুসরাইয়ের আমিতা ভূষণও ৪১০০৪ (+৭২৭০) ভোটে এগিয়ে। যদিও এই আসনগুলিতে কংগ্রেস লিড করছে, তবুও সামগ্রিক ফলাফলে দলের দুরাবস্থা বদলাতে পারেনি (Bihar Assembly Election 2025)।

আরও পড়ুন:‘বিহারের পর এবার বাংলার পালা!’ গিরিরাজের দাবিতে ক্ষুব্ধ তৃণমূল, পাল্টা জবাব কুণাল বললেন…
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়—এই দুর্বল ফলাফল এসেছে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্মদিনেই। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন, আধুনিক ভারতের রাষ্ট্রনির্মাণ এবং কংগ্রেসকে একটি সংগঠিত জাতীয় শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নেহরুর ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক। স্বাধীন ভারতের প্রথম নির্বাচনে কংগ্রেস বিপুল জয় পেয়েছিল নেহরুর নেতৃত্বে, আর আজ সেই দলেরই বিহারে এমন নিম্নমানের ফলাফল—রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ভাষায় “ইতিহাসের সঙ্গে তীব্র বিদ্রূপাত্মক বৈপরীত্য।” নেহরু যে কংগ্রেসকে আধুনিকতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রতীক করেছিলেন, সেই দল এখন ভোটের (Bihar Assembly Election 2025) মাঠে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে—যা নেহরুর জন্মদিনে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বিহারের নির্বাচনী (Bihar Assembly Election 2025) প্রবণতা পরিষ্কার—এনডিএ এগিয়ে ও মহাগঠবন্ধন পিছিয়ে। তবে কংগ্রেসের দুর্বলতা যে জোটের পরাজয়ের অন্যতম মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, তা এখন প্রায় নিশ্চিত। চূড়ান্ত ফল জানার অপেক্ষা এখন শুধু সময়ের।












