বাংলাহান্ট ডেস্ক : শহরের শ্রমজীবী মানুষদের মন জয় করতে সম্পুর্ণ রূপে সফল তৃণমূল, এবার একথাই স্বীকার করল রাজ্য সিপিএম। বাম শিবিরের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে অতি সহজেই খেটে খাওয়া গরিব মানুষদের কাছে পৌঁছাতে পারছে তৃণমূল। যা তৈরি করছে তৃণমূলের একটি বিশ্বস্ত ভোট ব্যাঙ্ক। ফলে এই সব মানুষদের স্বার্থের কথা বলা সত্ত্বেও শহরের খেটে খাওয়া মানুষদের সমর্থন পেতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ সিপিএম।
বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হচ্ছে সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্মেলন। আর এর ঠিক আগেই দলের আনাচ কানাচে উঁকি দিয়ে রীতিমতো চুল ছিঁড়ছেন বাম নেতারা। দলের অন্দরের গড়বড় যে কোথা থেকে মেরামতি শুরু করবেন তাঁরা তা বুঝে উঠতেই কালঘাম ছুটছে নেতাদের। রাজ্যে ক্রমেই প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে সিপিএম। মাত্র ১০ বছরের মধ্যে শাসক দল থেকে বিধানসভায় শূণ্য হয়ে যাওয়ার রেকর্ডও রয়েছে তাদেরই ঝুলিতে। বর্তমানে বামেদের খুব একটা ভালো চোখে দেখেন না রাজ্যের অধিকাংশ মানুষই। বাম নেতা-নেত্রীদের একাংশের অস্মিতা এবং সবজান্তা ভাবকেই এর জন্য দায়ী করেন পশ্চিমবঙ্গবাসী। ফলে এর ফলাফলও হাতে নাতেই পাচ্ছে সিপিএম।
জেলা সম্মেলনের আগে একটি খসড়া দলিল প্রস্তুত করেছে দল। এই দলিলের ৪৩ নম্বর পাতায় পার্টির সংগঠন নিয়ে আলোচনায় ক্ষেত্রে বলা হয়েছে বিগত ৩ বছরে শুধুমাত্র কলকাতা শহরেই সিপিএম ছেড়েছেন দেড় হাজার সদস্য। ছাত্র যুবদের একটি বড় অংশ যোগদানে আগ্রহ দেখালেও তাতে সুবিধার বদলে বরং পরোক্ষভাবে দলের ক্ষতিই হয়েছে খানিক। স্যোসাল মিডিয়ায় চুড়ান্ত সাফল্য এলেও লড়াইয়ের মাটিতে শিকে ছিঁড়তে পারেনি সিপিএম। এই ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশই কলেজ পড়ুয়া ফলে তাঁদের উপর বৃহত্তর ক্ষেত্রে ভরসা রাখতে পারেন না রাজ্যবাসী। একই সঙ্গে অনেকেরই অভিযোগ ‘কাজের কাজের বদলে অভিযোগ আর দুঃখ বিলাসেই দিন কাটাতে ভালোবাসে বাম শিবির’, ফলে আরওই কমেছে ভরসা। পাশাপাশি তলানিতে এসে ঠেকেছে সিপিএমের নেতা নেত্রী এবং সদস্য সংখ্যা। টিমটিম করতে থাকা সংগঠন নিয়ে তাঁদের পক্ষে কোনও ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না মানুষের কাছে পৌঁছানোর।
একই সঙ্গে, দলিলে বলা হয়েছে রোজ প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ কর্মসূত্রে কলকাতায় আসেন। এই বিশাল সংখ্যক মানুষের বেশিরভাগই অসংগঠিত শ্রমিক। কিন্তু সাংগঠনিক শক্তি এবং প্রাসঙ্গিকতার অভাবে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না তাঁদের কাছেও। এছাড়াও দলের ১১ হাজার সদস্যের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার জন লেভি দেন না। একবছর একপয়সাও দেননি এমন সদস্যের সংখ্যাও ৫ হাজার। আবার অনেকেই আছেন যাঁরা শুধু লেভি দিয়েই দায় সেরে ফেলেন। পার্টির কর্মসূচিতে কোনও আগ্রহই নেই তাঁদের।
এহেন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই কার্যতই তৃণমূলের রণনীতিকেই মান্যতা দিতে দেখা গেল বাম নেতৃত্বকে। কমরেডকুলের নেতাদের দাবি, শহরের বেকার যুবক যুবতীদের বহুতল নির্মানের সঙ্গে যুক্ত করে সাময়িক কাজের ব্যবস্থা করে দেন তৃণমূল নেতারা। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের ফলেও সম্পূর্ণভাবে তৃণমূলেই ভরসা রাখছেন খেটে খাওয়া মানুষ। অন্যদিকে মানুষকে কোনও ভাবে কাজের ব্যবস্থা করে দিতে ব্যর্থ সিপিএম। তাই আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও মানুষ কার্যতই পাত্তা দিচ্ছেন না বামেদের।