বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: ‘বন্দেমাতরম’ গানটি শুনে শিরদাঁড়ায় শিহরণ জাগেনি এমন ভারতীয়ের সংখ্যা হয়তো খুবই কম। কিন্তু এই গানের রচনার পিছনে যে ক্রিকেট খেলাটির একটা পরোক্ষভাবে বড় অবদান রয়েছে তা অনেকেই জানেন না। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিজের আনন্দমঠ উপন্যাসে এই কালজয়ী গানটিকে স্থান দিয়েছিলেন যার উৎপত্তির একটা বড় কারণ হল একটি ক্রিকেট ম্যাচ। পরে এই গান আসমুদ্রহিমাচল ভারতবাসীর মনের অত্যন্ত কাছের হয়ে দাঁড়ায়।
মুর্শিদাবাদ জেলার ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে ১৮৭৩ সালে নিজের কাছে ব্যস্ত ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র। সেই সময়ে ইংরেজদের হাতে তাকে বিনা কারণে অপমানিত হতে হয়েছিল। যদিও আইনি পথে নিজের অপমানের প্রতিকার চাওয়ার যাবতীয় চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন সাহিত্য সম্রাট। কিন্তু তার আবেগের দাম দেওয়া হয়নি। সেই অপমানের আগুন নিজের মনের মধ্যে চেপে রেখেছিলেন তিনি। যার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ এই গান মুক্তি পায়।
বহরমপুরে তৎকালীন ব্যারাক স্কোয়ারে যা বর্তমানে স্কোয়ার ফিল্ড নামে পরিচিত সেই মাঠেই এই বিশ্রী ঘটনা ঘটেছিল বঙ্কিমচন্দ্রের সাথে। ১৫ই ডিসেম্বর সেই মাঠে ওই সেনানিবাসের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল ডাফিনের নেতৃত্বে একটি ক্রিকেট ম্যাচ খেলছিলেন ইংরেজ সৈন্যরা। সন্ধ্যাবেলায় ওই স্কোয়ার মাঠের মধ্যে দিয়ে কর্মফেরত বঙ্কিমচন্দ্রের পালকি যাত্রা করতে গেলে ঘটে সমস্যা।
গণ্যমান্য অনেক ব্যক্তির সামনেই বঙ্কিমচন্দ্রকে পালকিচ্যুত করা হয় এবং আঘাতও করা হয়। অপমানিত বঙ্কিমচন্দ্র এই ঘটনার পরে তিনি একটি মানহানির মামলা দায়ের করেন কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা মিথ্যে কথা বলে ঘটনাটিকে ভ্রান্ত প্রমাণ করার চেষ্টা করতে থাকেন। শেষপর্যন্ত তাদের চেষ্টা সফল হয়।লোকমুখে শোনা যায় যে বঙ্কিমচন্দ্রের আসল পরিচয় প্রথমে জানতে না পারায় ওই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন লর্ড ডাফিন, কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের কাছে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমাও চান।তাতে অবশ্য বঙ্কিমচন্দ্রের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি এবং নৈহাটিতে নিজের বৈঠকখানায় বসে আনন্দমঠ উপন্যাস লেখার সময় তিনি এই কালজয়ী গানটি রচনা করে ফেলেন যার সুর আজও ভারতবাসীদের রক্তে আন্দোলন সৃষ্ট করে।