কলা গাছের বর্জ্য থেকে কোটিপতি স্কুলছুট ব্যক্তি! দিচ্ছেন অজস্র কর্মসংস্থানের সুযোগও

বাংলা হান্ট ডেস্ক: অর্থ উপার্জনের জন্য রয়েছে একাধিক উপায়। কিন্তু কোনো গাছের বর্জ্য থেকেই কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব এমন কখনও শুনেছেন? অকল্পনীয় মনে হলেও এটা একদমই সত্যি। আজ আমরা বর্তমান প্রতিবেদনে এমন একজন ব্যক্তির কথা জানাতে যাচ্ছি যিনি কলা গাছের বর্জ্যকে পুনঃব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন।

তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের মেলাকাল গ্রামের বাসিন্দা পিএম মুরুগেসান, একজন স্কুলছুট ব্যক্তি হলেও বর্তমানে তিনি কলা গাছের বর্জ্য থেকে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন এবং সকলের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন। ইতিমধ্যেই কলার বর্জ্য থেকে তিনি ব্যাগ, ঝুড়ি ইত্যাদি তৈরি করে তা বিক্রির মাধ্যমে আজ কয়েক’শ মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন।

শুধু তাই নয়, মুরুগেসান কলার ফাইবার থেকে দড়ি তৈরির সহজ ও কার্যকরী একটি মেশিনও আবিষ্কার করেন। যার সাহায্যে কলার বর্জ্য থেকে শক্ত দড়ি তৈরি করা সম্ভব। এখন তাদের তৈরি পণ্য বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

জানলে অবাক হয়ে যাবেন যে, বর্তমানে কোটিপতি এবং বেশ কয়েকটি যন্ত্রের উদ্ভাবক মুরুগেসান শুধুমাত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এই প্রসঙ্গে মুরুগেসান জানিয়েছেন যে “আমি আমার বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করার জন্য অষ্টম শ্রেণির পর পড়তে পারিনি এবং বাড়ির আর্থিক অবস্থা খারাপের কারণে আর পড়াশোনার সুযোগও পাইনি।”

একদিন মুরুগেসান গ্রামের এক ব্যক্তিকে ফুলের মালা তৈরির সময় সুতোর পরিবর্তে কলার আঁশ ব্যবহার করতে দেখেন। সেখান থেকেই কলার বর্জ্য থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে বিক্রি করার কথা মাথায় আসে তাঁর। যদিও কলাগাছের পাতা, ডালপালা এবং ফল সবই ব্যবহার করা হয় কিন্তু বহুক্ষেত্রেই গাছের আঁশটিকে ফেলে দেওয়া হয়। মুরুগেসান এটাকেই কাজে লাগাতে চাইছিলেন।

এরপর তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে এই বিষয়ে কথা বলেন এবং ২০০৮ সালে পরিবারের সহায়তায় কলা গাছের বর্জ্য থেকে দড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রথমে কলার বর্জ্য একটি মেশিনে রেখে নারকেলের ছাল থেকে দড়ি তৈরির কাজ শুরু করলেও তাতে তিনি সফল হননি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি একটি মেশিনে কলার ফাইবার প্রক্রিয়া করার চেষ্টা করেছি যা নারকেলের ছাল প্রক্রিয়াজাত করে। এটি কাজ করেনি কিন্তু আমি একটি সমাধান খুঁজে পেয়েছি।”

এরপর মুরুগেসান বহুবার চেষ্টা করেন কলার ফাইবার প্রসেসিং মেশিন তৈরির। ফলস্বরূপ, ২০১৭ সালে, তিনি একটি পুরানো সাইকেলের রিম ব্যবহার করে একটি “স্পিনিং ডিভাইস” তৈরি করেন। যেটা খুব সাশ্রয়ীও ছিল। এই যন্ত্রটি কলার বর্জ্যকে দ্রুতগতিতে ঘোরাতো। এরপর তিনি বায়োটেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্স কাউন্সিলের (বিআইআরএসি) সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাঁদের সাহায্যের জন্য অনুরোধ করেন।

pm news

এই ইনস্টিটিউটের অফিসাররা মেশিনটি দেখে খুব পছন্দ করেন। পাশাপাশি, অফিসাররা ওই এলাকার অন্যান্য কৃষকদেরও এই ধরণের মেশিন ব্যবহার করতে বলেন। তারপরে মুরুগেসানের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় এবং তিনি তাঁর মেশিনটিকে আরও উন্নত করার জন্য দেড় লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন এবং এটি তাঁর নামে পেটেন্ট করেন।

মুরুগেসান প্রথমে ৫ জনকে নিয়ে এই কাজ শুরু করলেও এখন ৩০০ জনেরও বেশি মানুষকে কর্মসংস্থান দিয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা।তাঁদের তৈরি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পণ্য বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। পাশাপাশি, রাজ্য সমবায় গোষ্ঠী এবং কারিগরী মেলায় প্রদর্শিত হয় এগুলি। মুরুগেসান প্রতি বছর প্রায় ৫০০ টন কলার ফাইবার বর্জ্য প্রক্রিয়া করেন। তাঁর কোম্পানি “এম এস রোপস প্রোডাকশন সেন্টার” থেকে টার্নওভার প্রতি বছর প্রায় ১.৫ কোটি টাকা।

তাঁর এই অসাধারণ সাফল্যের জন্য মুরুগেসান জাতীয় এবং রাজ্য স্তরে একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি ভারত সরকারের ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ মন্ত্রকের অধীনে খাদি উন্নয়ন ও গ্রামীণ শিল্প কমিশন কর্তৃক “PMEGP” (প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান কর্মসূচি) পুরস্কারে ভূষিত হন। শুধু তাই নয়, তিনি কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক থেকে “জাতীয় কৃষক বিজ্ঞানী পুরস্কার” এবং জবলপুরের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে “সেরা উদ্যোক্তা পুরস্কার”-ও পেয়েছেন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর