বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসির (Lionel Messi) কলকাতা সফর ঘিরে শহরে যেমন উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল, তেমনই সেই আনন্দের মাঝেই সামনে এল বড় বিতর্ক। টিকিটের বিপুল দাম, সাধারণ মানুষের বঞ্চনা এবং যুবভারতীতে বিশৃঙ্খলা, সব মিলিয়ে মেসি সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
শনিবার ভোরে কলকাতায় পা রেখেছিলেন লিওনেল মেসি (Lionel Messi)
শনিবার ভোরে কলকাতায় পা রাখেন লিওনেল মেসি (Lionel Messi)। তিনদিনের ‘গোট ট্যুর ইন্ডিয়া’-র শুরুতেই কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হোটেলে পৌঁছে যান আর্জেন্তিনীয় মহাতারকা। তাঁর কলকাতায় আসার খবরে শহরজুড়ে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে। ডিসেম্বরের ঠান্ডা উপেক্ষা করে মাঝরাতের পরেও হাজার হাজার অনুরাগী বিমানবন্দরের বাইরে ভিড় করেন প্রিয় তারকাকে একবার দেখার আশায়। তবে কড়া নিরাপত্তার কারণে মেসিকে সরাসরি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
মেসির (Lionel Messi) সঙ্গে কলকাতায় এসেছেন তাঁর দীর্ঘদিনের সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ এবং আর্জেন্তিনা দলের রদ্রিগো ডি পল। কিন্তু এই উৎসবের আবহেই শুরু হয় টিকিটের দাম নিয়ে বিতর্ক। অভিযোগ ওঠে, অত্যধিক দামের কারণে বহু ফুটবলপ্রেমী মেসিকে দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব রাজ্যপালের
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজ্য সরকারের কাছে একটি বিশদ রিপোর্ট চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। লোকাল ভবনের এক আধিকারিক সংবাদ সংস্থা জানান, বহু ফুটবলপ্রেমী রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ করেছেন যে টিকিটের দাম ‘অনেক বেশি’ হওয়ায় তাঁরা তাঁদের প্রিয় খেলোয়াড়কে দেখতে পারছেন না।
রাজ্যপাল এই সফরে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন, সাধারণ মানুষের আবেগের সুযোগ নিয়ে কেন একজন বেসরকারি ব্যক্তিকে অর্থ উপার্জনের অনুমতি দেওয়া হল। লোক ভবনের ওই আধিকারিক জানান, রাজ্যপালের দপ্তরে একের পর এক ফোন ও মেল আসছে, যেখানে ফুটবল ভক্তরা জানাচ্ছেন টিকিটের দাম তাঁদের নাগালের বাইরে।
রাজ্যপাল আরও জানতে চেয়েছেন, মেসির (Lionel Messi) মতো একজন বিশ্ব তারকা শহরে থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ কেন তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন না। তিনি এই বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে, শুধুমাত্র যারা অনেক বেশি দাম দিয়ে টিকিট কিনেছেন, সেই অল্প কয়েকজন মানুষই মেসিকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সরকারকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন, এই সফরের মাধ্যমে যে বেসরকারি ব্যক্তি অর্থ উপার্জন করছেন, তাঁর বিষয়ে সম্পূর্ণ রিপোর্ট দিতে হবে।
এদিকে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসির (Lionel Messi) উপস্থিতি নিয়েও চরম অসন্তোষ দেখা যায়। মেসি মাঠে ছিলেন মাত্র ২৩ মিনিট। এরপর তিনি সল্টলেক স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে যান। যতক্ষণ তিনি মাঠে ছিলেন, নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছিলেন যে গ্যালারি থেকে দর্শকরা এক পলকের জন্যও তাঁকে দেখতে পাননি।

এরপরই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটেও মেসিকে (Lionel Messi) একবার দেখতে না পেয়ে ক্ষুব্ধ দর্শকরা বোতল ছুড়তে শুরু করেন। গ্যালারি থেকে হোর্ডিং ছেঁড়া হয়। এমনকি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে লক্ষ্য করেও বোতল ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে মেসিকে নিয়ে সেলফি তোলার হিড়িকও পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। সব মিলিয়ে, মেসির কলকাতা সফর একদিকে যেমন উন্মাদনা তৈরি করেছে, অন্যদিকে তেমনই টিকিটের দাম ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।












