বাংলা হান্ট ডেস্ক: তফশিলি জাতি-উপজাতি এবং দলিত মানুষদের সংখ্যা ভারতের (India) মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ। এনডিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বেশি করে দেশের নানা প্রান্তে লাগাতারভাবে দলিত সম্প্রদায়ের নাগরিকদের একাংশের ওপর চলছে দলিত নির্যাতন। ভারতের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে দলিত সম্প্রদায়ের নাগরিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি খুনও হচ্ছেন। এমতাবস্থায়, কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টসের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতে দলিত নির্যাতন উত্তরোত্তরভাবে বাড়ছে।
সূত্রের খবর, দেশের যে রাজ্যগুলিতে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর ব্যাপকভাবে দলিত নির্যাতন চলছে সেই রাজ্যগুলির তালিকায় রয়েছে গুজরাট, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য। তবে, কেবল দলিত পুরুষরা নন পাশাপাশি দলিত সম্প্রদায়ের মহিলারাও লাগাতারভাবে শারীরিক ও মানসিক হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। এই ব্যাপারে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো জানিয়েছে, দৈনিক দলিত মহিলা ও নাবালিকা মিলিয়ে ১০ টি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে ভারতের মাটিতে। ২০১৪ সালে এনডিএ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আর এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তরফে জানানো হয়েছে, নথিভুক্ত হচ্ছে না দলিত মহিলাদের ওপর অত্যাচারের সব ঘটনা। এমতাবস্থায়, আংশিক ঘটনা জানাজানি হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে্ দলিত সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত উচ্চবর্ণের নাগরিকরা। এছাড়া দলিতদের আক্রমণের লক্ষ্য করে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়ানো হচ্ছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে দলিত নির্যাতনের মতো সামাজিক সমস্যা নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কী ব্যবস্থা নেয় সেটাই দেখার। উল্লেখ্য যে, ভারতীয় সংবিধানের দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের সমানাধিকার স্বীকৃত। পাশাপাশি, ভারতীয় সংবিধানে অস্পৃশ্যতাও নিষিদ্ধ। অথচ বাস্তব পরিস্থিতি ঠিক এর বিপরীত।
আরও পড়ুন: বড় উপহার দিল রেল, যাত্রী ভাড়া কমাল ৫০%! ভোটের আগে বিরাট ঘোষণা
বিভিন্ন গবেষণায় যে তথ্য ধরা পড়েছে তা অনুযায়ী, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে দলিত সম্প্রদায়ের মহিলারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পর্যবসিত হয়েছেন। এর কারণ তথাকথিত হিন্দুত্ববাদের বাড়বাড়ন্ত। আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনও পৃথক সমীক্ষা চালিয়েছে। সমীক্ষার ফলাফলে মোদীর আমলে মহিলাদের ওপর নির্যাতন থেকে আরম্ভ করে মহিলা অপহরণ রুখতে সরকারি নীতির ব্যর্থতা তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন: অবস্থা শোচনীয়! চিনের ইতিহাসে সবথেকে বড় কেলেঙ্কারি, দেউলিয়া হয়ে যাওয়া কোম্পানি দিল ধাক্কা
তবে ইউপিএ আমলে যে, দলিত সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষের ওপর যে নিপীড়ন হত না তা নয়। সমীক্ষায় দেখা দিয়েছে, ১৯৯১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অপরাধ ১৭৭.৬ শতাংশ বেড়েছে। বিগত করোনা পরিস্থিতিতেও দলিত সম্প্রদায়ের অন্তগর্ত মানুষের ওপর অত্যাচার অব্যাহত ছিল। সূত্রের খবর, করোনা পরিস্থিতিতে ভারতীয় নাগরিক দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অত্যাচার ১.২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। উল্লেখ্য যে, স্বাধীনতার পর সাড়ে সাত দশক পেরিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এদেশের দলিত সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষকে যেভাবে উচ্চবর্ণের পদানত থাকতে হচ্ছে আদতে তা প্রকৃত স্বাধীনতার পরিপন্থী। স্বাধীন ভারতের সংবিধানের ১৪ নম্বর এবং ১৫ নম্বর ধারা অনুসারে, যে কোনও নাগরিকের সমানাধিকার স্বীকৃত। এমতাবস্থায়, দলিতদের ওপর অবিরাম যে অত্যাচার চলছে তা ভারতীয় সংবিধানেরই অবমাননা।