বাংলাহান্ট ডেস্ক: বলা হয় বাবারাই মেয়েদের জীবনে সবথেকে ভাল বন্ধু। মায়ের থেকেও বাবাদের স্থান অনেক ক্ষেত্রেই বেশি কাছের হয় মেয়েদের কাছে। কারন বাবাই সেই প্রথম পুরুষ যার কাছে মন খুলে বলা যায় সব কথা, ব্যথা-কষ্ট। বাবারাও মেয়ের জন্য করতে পারেনা এমন কাজ নেই। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস ভুলে গেলেও ভোলে না মেয়ের আবদার করা খেলনা বা সাজের জিনিস বা কোনও খাবার। কন্যাসন্তানের পিতাদের জিজ্ঞাসা করে দেখবেন, সবথেকে বেশি ভয় তাদের একটি মাত্র জিনিসেই। একটা সময় সেই ছোট্ট মেয়েটাও চলে যাবে বাড়ি ছেড়ে, শ্বশুরবাড়িতে। মনের কষ্ট চেপেও সেই দিনটার জন্যই সন্তানের জন্মের সময় থেকেই টাকা জমাতে শুরু করেন বাবারা। ধনী হোক বা দরিদ্র, বাবার ভালবাসায় কোনও ফারাক নেই। নিজের শেষ সম্বলটাও সে উজাড় করে দিতে পারে মেয়ের মুখ চেয়ে।
নিজে যতটা খুশি, স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পেরেছেন মেয়েকে, শ্বশুরবাড়িতে গিয়েও একইরকম খুশি পাক সে, এটাই চাওয়া প্রত্যেকটা বাবার। এর ব্যতিক্রম ছিলেন না বরানগরের সন্দীপ সরকারও। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়ে যাবেন, এটাই ছিল তাঁর ইচ্ছা। কিন্তু ভাগ্য বড় নিষ্ঠুর। জিভের ক্যানসারে শয্যাশায়ী তিনি। চিকিৎসকরা দিয়ে দিয়েছেন শেষ জবাব। সত্যিই আর বেশি দিন নেই হাতে।
চিকিৎসকরা জানতে চেয়েছেন, শেষ ইচ্ছা কী? শেষশয্যায় শুয়েও বাবার উত্তর, ‘মেয়ের বিয়েটা যদি দেখে যেতে পারি’।
তারপরেই শুরু বিয়ের তোড়জোড়। হাওড়ার নারায়না সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে সন্দীপ বাবুর ঘরের পাশেই বসল বিয়ের আসর। মৃত্যুপথযাত্রী বাবা সাক্ষী থাকলেন একমাত্র মেয়ের, দিওতিমার বিয়ের। হাসপাতালেই হয় রেজিস্ট্রি, আংটিবদল। উপস্থিত ছিলেন আত্মীয়-স্বজনরা। মালা পরে স্বামীকে পাশে নিয়ে নববিবাহিতা দিওতিমা দাঁড়ায় বাবার শয্যার পাশে। চোখে জল নিয়েই দিওতিমা জানায়, “জানি বাবা যেকোনও দিন চলে যাবে। কিন্তু আমার নতুন জীবনের শুরুতে তাঁর আশীর্বাদই সবথেকে দামি আমার কাছে।”
২০১১ সালেই জিভের ক্যানসার ধরা পড়েছিল সন্দীপ বাবুর। সেই সময়ে অস্ত্রোপচার করার পর ছয় বছর বেশ ভালই ছিলেন তিনি। তারপর ফের শুরু হয় সমস্যা। এবার জানা যায়, চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে ক্যানসার। চিকিৎসকরা জানান, েই পর্যায়ের রোগীরা সাধারনত এক বছরের বেশি বাঁচেন না। তাও হাল ছাড়েননি চিকিৎসকরা। শেষ চেষ্টা করে দেখতে চেয়েছিলেন। কথা দিয়েছিলেন, ইমিউনোথেরাপি দিয়ে তিন বছর বাঁচিয়ে রাখবেন সন্দীপ বাবুকে। সেই তিন বছরের সময়সীমা শেষ হয়েছে এই ফেব্রুয়ারিতেই। ওজন একেবারেই কমে গিয়েছে সন্দীপ বাবুর। কেমোথেরাপি নিয়ে চুলও উঠে গিয়েছে প্রচুর। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারিই বিয়ের তারিখ ছিল দিওতিমার। কিন্তু এই কটা দিনও বাঁচার সম্ভাবনা কম সন্দীপ বাবুর। তাই অগত্যা এগিয়ে আনা হয় বিয়ের তারিখ।