বাংলা হান্ট ডেস্ক : দিঘা (Digha) হল বাঙালিদের কাছে একটা আলাদাই ইমোশন। ঘুরতে যাওয়ার কথা উঠলেই সবার প্রথমে বাঙালির মাথায় আসে দিঘা যাওয়ার কথা। এই দিঘা যাওয়ার জন্য মানুষ বেশিরভাগ সময়ই ট্রেন, বাস ব্যবহার করে থাকে। যা সাধারণ মানুষের পকেটের জন্য স্বাস্থ্যকর। তাছাড়া আপনার কাছে আপনার নিজস্ব গাড়ি থাকলে আপনি নিজেই খুব সহজে দিঘা পৌঁছতে পারবেন। যদিও বা বাস, ট্রেনের পথও আরামদায়ক।
আগে নাকি দিঘা পৌঁছতে সময় লাগতো প্রায় দু-দিন। এমন টা কী করে সম্ভব? আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না ১০০ বছর আগে দিঘা পৌঁছতে সময় লাগতো দু-দিন। ১০০ বছর আগে দিঘা নামে পরিচিত জায়গাটির নাম ছিল বীরকুল (Birkul)। যা আগে দিঘার সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী গ্রাম ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই জায়গাটি আজ আর নেই। কারণ জানলে হয়তো আপনিও অবাক হবেন।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, বীরকুল পরগনা সমুদ্রের নীচে তলিয়ে গেছে। আজ আপনারা যারা দিঘাতে ঘুরতে যান, সেই জায়গার ইতিহাস গড়ে উঠেছিল কিন্তু এই বীরকুল পরগনা থেকেই। ১৭৭৫ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস (Warren Hastings) বীরকুল গ্রামে গরমের ছুটিতে ঘুরতে গিয়েছিলেন। এবং তিনি সেখানে একটি বাংলো (Bungalow) তৈরি করে ছিলেন। সেখানকার পরিবেশ এতটাই শান্ত প্রকৃতির যে সেই বীরকুলের সৈকতে একটি বিশ্রামাগার তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন : এবার থেকে পরীক্ষায় থাকবে উর্দু, অলচিকি! WBCS-WBPS নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত মমতার
যদিও সময়ের সাথে সাথে এটি সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিক্ষয়ের কারণে ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়। শোনা যায় হেস্টিংসের বাংলোটিও সমুদ্রের গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৫ বছর পর, অর্থাৎ ১৭৮০ সালের দিকে পূর্ব মেদিনীপুরে (East Medinipur) যাতায়াত ব্যবস্থা বলতে ছিল ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি এবং নৌকাতে করে। কিন্তু প্রায় ১০০ বছর আগে দিঘা যাওয়া চারটি খানি বিষয় ছিল না। তখন সাহেবরা এসব মাধ্যমেই দিঘা আসতেন। সেই সময় তাদের থাকার জন্য গড়ে উঠেছিল ছোটো ছোটো বাংলো।
এরপর ১৯২১ সালে কলকাতায় আসেন বিখ্যাত হ্যামিল্টন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা জন স্নেইথ (John Snaith)। তিনি প্রথমে ঘোড়ার পিঠে চেপে দিঘা পৌঁছান। প্রথমবার এসেই দিঘাকে ভালোবেসে ফেলেন তিনি। প্রায় দেশ স্বাধীনের পর জন স্নেইথ আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রীকে দিঘাকে সৈকত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। তারপর ১৯৬২ সালে মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় (Bidhan Chandra Roy) মায়ের নামে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা হয় দিঘায়। তারপর ধীরে ধীরে খড়গপুর (Kharagpur) থেকে দিঘার উদ্দেশ্যে প্রথম একটি পিচের রাস্তা তৈরি করা হয়।সেই সময় দিঘা যেতে হলে মানুষ ওই পিচের রাস্তায় বাসে করে যেতেন। আবার ট্রেনে করেও দিঘা পৌঁছতো মানুষ।
আরও পড়ুন : ‘বিষ্ণু মাতা’ অতীত, এবার কর্ণাটককে কানাডা বানিয়ে দিলেন মমতা! ভুল বুঝে উইথড্র করলেন মন্তব্য
যদিও আগেকার বাসগুলির চেহারা এখনকার বাসের তুলনায় একদমই আলাদা। তখনকার বাসগুলির ইঞ্জিন ছিল সাদা রঙের। যার কারণে বাসের সামনের অংশ অনেকটাই বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকতো। হয়তো শুনতে অবাক লাগবে, সেই সময় বাসগুলিতে ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস এবং থার্ড ক্লাসের ব্যবস্থা ছিল। ১৯৭০ সালের পরের দিক করেই নন্দকুমার থেকে কাঁথি হয়ে সড়কপথ গড়ে ওঠে। যার কারণে কলকাতা ও দিঘার মধ্যেকার দূরত্ব প্রায় ৭০ কিমি মতো কমে যায়।