বাংলা হান্ট ডেস্কঃ যাদবপুর ইস্যুতে উত্তাল রাজ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের বাংলা অনার্সের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর রহস্য মৃত্যুতে (Jadavpur University Student Death) কেও যেন খুলে দিয়েছে প্যান্ডোরা বক্স! উঠছে র্যাগিং তত্ত্ব। অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার একাধিক পড়ুয়া প্রাক্তনী। ওদিকে রাজ্যের আর পাঁচটা ঘটনার মতো স্বপ্নদীপের মৃত্যু ঘিরেও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
ঘটনার পরই পড়ুয়া মৃত্যুর জন্য ‘মার্কসবাদীদের’ দায়ী করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওদিকে যাদবপুর ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় তৃণমূল সরকারকে বেলাগাম আক্রমণ শানালেন বিজেপির দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। রাজ্য সরকারকে ‘নপুংসক’ আখ্যাও দেন মেদিনীপুরের সাংসদ।
রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ায় একটি দলীয় সভায় বক্তব্য রাখেন দিলীপ ঘোষ। সেখান থেকেই তার র্যাগিং, প্রাক্তনীদের দাপিয়ে বেড়ানো সম্পর্কে দিলীপের মন্তব্য, ‘‘কাশ্মীর ঠান্ডা করে দেওয়া হয়েছে, আর যাদবপুর ইউনিভার্সিটি তো কোন ছার! বুটের লাথি মেরে জেএনইউ ঠান্ডা করে দেওয়া হয়েছে।’’
আর কি কি বললেন দিলীপবাবু? ‘‘ওখানে যেই খুন করুক, বিজেপি তো ছিল না। সিপিএম, নকশাল, কংগ্রেসের সংগঠন আছে। তৃণমূলেরও আছে। এবার কিন্তু এবার বিজেপির দিকে আঙুল তুলতে পারবেন না।’’
আরও পড়ুন: চরম গাফিলতি! এবার কলকাতা হাইকোর্টের রোষের মুখে দুই বিচারক, শোরগোল তুঙ্গে
‘‘এই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, এই জেএনইউ, এই ওসমানিয়া ইউনিভার্সিটি হায়দরাবাদ —এরা একই তারে জোড়া আছে। এখানে বার বার বিদেশি এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই দেশকে টুকরো করার স্লোগান ওঠে। এরা টুকরে টুকরে গ্যাং।’’
‘‘আমার-আপনার বাড়ির ছেলে যে কখনও কমিউনিজ়ম কী জানে না, নকশাল রাজনীতি বোঝে না, সে ওখানে গিয়ে কী করে অতি বাম হয়ে যায়! আসলে ওই পরিবেশ তৈরি করা রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মদ-গাঁজার আসর বসাচ্ছে। ছেলে-মেয়ের কোনও ভেদাভেদ নেই। টিভিতে আবার বলছে, আমরা মাওবাদী। আমাদের মদ-গাঁজা খাওয়ার অধিকার আছে।’’
আরও পড়ুন: গভীর নিম্নচাপে উত্তাল আবহাওয়া! টানা তিন দিন ৫ জেলায় অরেঞ্জ অ্যালার্ট: ওয়েদার আপডেট
দিলীপের মুখে উঠে আসে বছর তিনেক আগের প্রসঙ্গও। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের উপর হেনস্থার সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে দিলীপ বলেন, ‘‘ওই সময়ে বাবুল সুপ্রিয়, অগ্নিমিত্রা পালের উপর আক্রমণ হয়েছিল। বাবুলকে থাপ্পড় মারা হয়েছিল। গভর্নর গিয়েছিলেন উদ্ধার করতে। তাঁকেও কালো পতাকা দেখানো হয়েছিল। গাড়ি আটকানো হয়েছিল। কিন্তু আমি বলেছিলাম, এর জবাব দেব। তার পর আমাদের লোকেরা গিয়ে অফিস উড়িয়ে দিয়েছিল, যেখানে ওরা মদ খেত।’’ দিলীপের মতে, এটা ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক।’
রাজ্য সরকারকে বেনজির আক্রমণ করে দিলীপ বলেন, ‘‘এই হিজড়া সরকারের দম নাই। এরা মা-বোনের ইজ্জত, ছেলেমেয়ের প্রাণ নিয়ে টানাটানি করে।’’ তার অভিযোগ, ‘‘পুলিশ কী জন্য আছে? শুধু ঘুষ নেওয়ার জন্য? কেন পুলিশ লেজ গুটিয়ে বসে আছে? বাবা-মা স্বপ্ন নিয়ে ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছেন। সেখানে এমন ঘটনা। এই বিশ্ববিদ্যালয় চলা উচিত কি?’’
সাংসদের কথায়, ‘‘যেখানে যেখানে সন্ত্রাসবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়েছে, আমরা বুট দিয়ে তার মাথা ভেঙে দিয়েছি। যান, জেএনইউ-তে যান। ওখানেও প্রকাশ্যে মদ-গাঁজা খাওয়া হত। ‘আজাদি’ স্লোগান তোলা হত। ওদের সবাইকে ‘আজাদ’ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ওখানে লেনিন নেই। স্ট্যালিন নেই। বিবেকানন্দের মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। যেদিন এখানকার এই নপুংসুক সরকার যাবে, সেদিন যাদবপুরে আমরা বিবেকানন্দের স্ট্যাচু তৈরি করব। ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান উঠবে।’’
তার কথায়, ‘‘এর পরিবর্তন চাই। এ রকম বহু ছিল। কাশ্মীর ঠান্ডা করে দিয়েছি আর কোথায় এই যাদবপুর! এখানে শুধু সরকার আছে। কিন্তু কী ভাবে সেই সরকার চলছে, কেন চলছে, কেউ জানে না।’’ প্রসঙ্গত এই প্রথম নয়, এর আগেও যাদবপুর ইস্যুতে তৃণমূল সরকারকে ঝাঁঝালো আক্রমণ করেছিলেন দিলীপ ঘোষ।