SSKM-র ‘উডবার্ন ওয়ার্ড”, যেখানে ভর্তি হন নেতারা সেখানকার নামকরণের ইতিহাস জানেন?

বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল হল এসএসকেএম বা পিজি হাসপাতাল। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ সমগ্র রাজ্য জুড়েই চিকিৎসার জন্য আসেন এখানে। পাশাপাশি, মাঝে মাঝেই বিরল সব অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মানুষের জীবন বাঁচিয়েও খবরের শিরোনামে উঠে আসে এই হাসপাতালের নাম। এছাড়াও,রাজ্য সরকারের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হিসেবেও চিহ্নিত এসএসকেএম হাসপাতাল।

তবে, সম্প্রতি এই হাসপাতালেরই একটি নির্দিষ্ট ওয়ার্ড ক্রমশ উঠে আসছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। যেটির নাম হল উডবার্ন ওয়ার্ড। মূলত, এই ওয়ার্ডে বিশিষ্টজনদেরই চিকিৎসা মেলে। সম্প্রতি গরুপাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের তলবের উত্তর দিতে গিয়ে এই ওয়ার্ডেই ভর্তি হন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডল। এছাড়াও, রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী তথা প্রথমসারির নেতৃত্বদেরও প্রথম পছন্দ এই ওয়ার্ড।

এদিকে, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে যে এই নির্দিষ্ট ওয়ার্ডটির নাম “উডবার্ন” রাখা হল কেন? বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা সেই প্রসঙ্গই বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব। এমনিতেই উডবার্ন শব্দটি যে বিশিষ্ট একজন মানুষের নামের সাথে জড়িত তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। স্যার জন উডবার্ন-এর নাম থেকেই এই ওয়ার্ডটির নামকরণ করা হয়।

ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায় যে, স্যার জন উডবার্ন জাতিতে ব্রিটিশ হলেও তাঁর জন্ম হয় কিন্তু এই রাজ্যেই। মূলত, ব্যারাকপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তৎকালীন সময়ে তিনি একজন দক্ষ প্রশাসকের ভূমিকা গ্রহণ করেন। ১৮৬৩ সাল নাগাদ স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি এবং এডিনবরা ইউনিভার্সিটি থেকে শিক্ষালাভের পর ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন তিনি।

এছাড়াও, তিনি কার্যকরী মন্ত্রিসভা তথা এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্যও হয়েছিলেন। যদিও, ১৮৯৮ সালে সরাসরি সেকালের অবিভক্ত বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরের পদে স্থলাভিষিক্ত হন জন উডবার্ন। আমৃত্যু এই পদেই দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ১৯০২ সালে মৃত্যু হয় তাঁর।

এদিকে, উডবার্ন যখন বাংলার শাসনভার হাতে নিয়েছিলেন সেই সময়ে কলকাতা জুড়ে থাবা বসিয়েছিল ভয়ঙ্কর প্লেগ মহামারী। অবস্থা এতটাই বেগতিক হয়ে যায় যে, আক্রান্ত মানুষদের সেবা করার জন্য পথে নেমেছিলেন ভগিনী নিবেদিতা, চিকিৎসক রাধাগোবিন্দ কর-এর মতো মানুষেরা। সেই সময়েই মহামারী প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন উডবার্ন।

এমনকি, তাঁর হাত ধরেই প্রেসিডেন্সি জেনারেল হাসপাতাল বা পিজির প্রভূত উন্নতিসাধন হয়েছিল। মূলত, নিজের শাসনকালে কারা ও স্বাস্থ্য বিভাগের বিপুল উন্নতি ঘটিয়েছিলেন তিনি। আর সেই কারণেই, তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে স্যার জন উডবার্নের নামেই এই বিশেষ ওয়ার্ডের নামকরণ করেছে হাসপাতাল।

woodburnjpg 630x420 1

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উডবার্নের মৃত্যুর পর “লন্ডন টাইমস” সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক শোকবার্তায় বলা হয়েছিল যে, স্যার জন উডবার্নের মতো জনপ্রিয় শাসক বাংলা এর আগে পায়নি। তবে, শুধুমাত্র প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডই নয় পাশাপাশি, কলকাতার সংস্কৃতিজগতের সঙ্গেও প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯০০ এবং ১৯০১ সাল, এই দুই বছর যাবৎ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট পদও অলঙ্কৃত করেছিলেন স্যার জন উডবার্ন।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর