বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিশেষত এই করোনা আবহে প্রায় দ্বিতীয় ঈশ্বর চিকিৎসকরাই, সামনে থেকে দাঁড়িয়ে সমানে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। যদিও রোগীর মৃত্যুর পর পরিবারের বিক্ষোভ, এমনকি ডাক্তারদের ঘিরে ধরে কটু কথা এসব পরিস্থিতিও এখন গা সওয়া। কিন্তু তাই বলে কি রোগীর বিপদ জেনেও থেমে থাকা যায়? একথা ঠিক যে অনেক সময় শত চেষ্টার পরেও কিছু করার থাকেনা। কিন্তু পরিস্থিতি বিরূপ বলে চেষ্টাটুকু তো আর বন্ধ করে দেওয়া যায় না। এটাই ফের একবার প্রমাণ করে দিলেন উদয়নারায়নপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের বেশ কিছু চিকিৎসক।
কার্যত কয়েকদিনের লাগাতার বৃষ্টি এবং ডিভিসির জল ছাড়ার জেরে এখন বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে হাওড়া উদয়নারায়নপুর। বিস্তীর্ণ জলের তলায় এলাকার বেশিরভাগ বাড়িঘর। একই দৃশ্য স্টেট জেনারেল হাসপাতালেও কার্যত চারিদিকে থই থই করছে জল। মাঝ সমুদ্রে জাহাজের মতই ভেসে আছে হাসপাতাল বাড়িটা। কয়েকদিন আগেই জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরীর। কিন্তু পরিস্থিতি এতটা খারাপ হওয়ার পরেও রোগীর বিপদের কথা জেনে থেমে থাকতে পারেনি চিকিৎসকরা।
কার্যত প্রায় ৪০০ মিটার কোমর অবধি জলে সাঁতার কেটে হাসপাতালে পৌঁছান ডা. তারক দাস, ডা. প্রভাস দাস, আর এনাস্থেসিস্ট ডা. অশোক খাঁড়া। কয়েকদিন আগেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ বছরের দীপালী মালিক নামক এক মহিলা। বেশ কিছুদিন যাবৎ তার জরায়ু থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। বয়সজনিত কারনে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছে দিপালীদেবীর। তার পরেও তিনি ভেবেছিলেন হয়তো বা কেটে গিয়েছে, কিন্তু টানা ৩০ দিন পরেও রক্ত বন্ধ না হয় হাসপাতালে আসেন তিনি। দেখা যায় তার জরায়ুতে রয়েছে একটি অতিকায় টিউমার। সেই দিপালীদেবীরই অপারেশন ছিল আজ, অবস্থা ক্রমে সংকটজনক হয়ে উঠছে বলেই ঝুঁকি নিতে চাননি চিকিৎসকরা।
সাংবাদিকরা যখন তাদের জিজ্ঞেস করেন, এই পরিস্থিতিতে বিষাক্ত সাপ খোপ রয়েছে চারিদিকে ভয় করেনি আপনাদের? তারা জানান, রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল। এই অবস্থায় তাকে যন্ত্রণা মুক্তি করাই ছিল প্রথম লক্ষ্য। জানা গিয়েছে অপারেশনে প্রায় ৫০০ গ্রাম অর্থাৎ ছোট একটি তরমুজের সাইজের টিউমার কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। হিসটেরেকটমি নামক এই অপারেশনের মাধ্যমে ইউটেরাস বা জরায়ু বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও তাই করেছেন চিকিৎসকরা। আপাতত অনেকটাই সুস্থ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্সদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন তিনি। চিকিৎসকদের এই কর্তব্যপরায়ণতাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে দিপালীদেবীর পরিবারও।