বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা খবরের কাগজে চোখ রাখলে আমাদের সামনে কতই না বৈচিত্র্যময় খবরে উঠে আসে! কখনো কোন দুটি প্রাণীর মধ্যে হিংস্রতার লড়াই তো কখনো আবার তাদের মধ্যে খুনসুটির চিত্র ধরা পড়ে। তবে সম্প্রতি পশ্চিম বর্ধমান এলাকায় যে ঘটনাটি খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে, তা আপনাকে আবেগঘন করে তুলবেই।
মানুষ হোক কিংবা অন্যান্য যে কোন পশু-পাখি, মায়ের মমতা এবং ভালোবাসা সবক্ষেত্রেই সমান থাকে। যে কোন প্রাণীর ক্ষেত্রেই তা হয় নিখাদ এবং নিঃস্বার্থ। ঠিক এহেন ঘটনারই চিত্র উঠে এসেছে পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডাল থানার জামবাদ কোলিয়াড়ি এলাকায়। সাম্প্রতিক সময়ে একটি কুকুরকে দেখে প্রায়শই তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখা মেলে দুই সদ্যোজাত ছাগল ছানাকে। এরপর কুকুরটিও তাদেরকে দুধ খাওয়াতে মশগুল হয়ে পড়ে। তবে হঠাৎ ছাগলছানাদের প্রতি কুকুরটির এহেন প্রেমের কারণ কি?
সেই রহস্য উন্মোচন করে এলাকার এক বাসিন্দা প্রভাত বাউরি বলেন, “আমাদের বাড়িতে আমরা বিভিন্ন পশু-প্রাণী নিয়ে আসি এবং তাদের দেখাশোনা করি। বর্তমানে আমাদের বাড়িতে জুলি নামের একটি কুকুর রয়েছে আর কিছুদিন পূর্বে একটি ছাগলও ছিল এখানে। স্বভাবতই, তাদের দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে জুলি এবং ছাগল দুজনই সন্তান প্রসব করে। জুলির চারটি কুকুর ছানা হয় এবং কিছুদিন পর ছাগলটিরও দুটি বাচ্চা হয়। কিন্তু এর পরেই একের পর এক বিপত্তি নেমে আসে।”
প্রভাত বাবু জানান, “অসুখ হওয়ার কারণে কুকুরের চারটি বাচ্চাই মারা যায় এবং তার কিছুদিনের মধ্যে একটি গাড়ির ধাক্কায় ছাগলটিও প্রাণ হারায়। এর পরেই সেই দুই ছাগল ছানাকে নিজের কাছে টেনে নেয় জুলি। প্রতিদিন তাদের দুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে দিনের সমস্ত সময় তাদের সাথেই খাওয়া-দাওয়া, ঘুমের মাধ্যমে কুকুরটি মায়ের দায়িত্ব পালন করে চলে।” ফলে এক্ষেত্রে একাধারে যেমন মৃত ছাগলের প্রতি বন্ধুত্ব পালন করে চলেছে কুকুরটি, সেরকমই ছাগল ছানাদুটির মায়ের অভাব পূরণ করে সে।
জুলির এই কর্মকাণ্ড দেখে আবেগঘন হয়ে পড়ে এলাকারই এক মহিলা। তিনি জানান, “ছয় মাস আগে আমার নিজের ছেলেও একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। ওদের দেখেই বোঝা যায় যে, পৃথিবীর বুকে মানুষ হোক কিংবা অন্যান্য যে কোন জানোয়ার, মায়ের ব্যথা সর্বত্রই একই হয়।”