বাংলাহান্ট ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীদের সংখ্যা নির্দিষ্টভাবে বেঁধে দিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউসের তরফে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০২৬ অর্থবর্ষে আমেরিকা সর্বোচ্চ ৭৫০০ জন শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে। মার্কিন ইতিহাসে শরণার্থী আশ্রয় নীতিতে এই বার্ষিক সীমাই সবচেয়ে কম, যা অভিবাসন নীতি নিয়ে ট্রাম্পের কড়া অবস্থানেরই প্রতিফলন বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, ক্ষমতায় ফিরলে অভিবাসন এবং শরণার্থী নীতিতে বড়সড় সংস্কার আনা হবে। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতেই দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠনের পর থেকেই পদক্ষেপ শুরু করেন তিনি। দেশের দক্ষিণ সীমান্তে অবৈধ অভিবাসী ঢোকা রুখতে নজিরবিহীন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিভিন্ন রাজ্যে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানে গতি আনা হয় এবং বহু শরণার্থীকে দেশছাড়া করা হয়। এবার সেই নীতিতেই নতুন মাত্রা যোগ হলো বার্ষিক শরণার্থী কোটা কমানোর মাধ্যমে।
শরণার্থীদের সংখ্যা বেঁধে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)
হোয়াইট হাউসের বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, আমেরিকার নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠন এবং বিরোধীদের অভিযোগ, এটি সরাসরি বর্ণবিদ্বেষ এবং মানবিক মানদণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মার্কিন প্রদেশে ‘নো কিংস’ নামে একটি গণআন্দোলন শুরু হয়েছে ট্রাম্পের (Donald Trump) এই নীতির বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট একনায়কোচিতভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং সে দেশের আদর্শ ও সংবিধানকে অমান্য করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটি জায়গায় সেনা মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেছেন, “আমেরিকাকে রক্ষা করা আমার প্রথম কর্তব্য। যারা সত্যিই সাহায্যের প্রয়োজন, তাঁদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।”
আরও পড়ুন: তিক্ততা ভুলে স্বাভাবিকের পথে সম্পর্ক! ১০ বছরের প্রতিরক্ষা কাঠামোতে সই দিল দিল্লি-ওয়াশিংটন
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর শরণার্থী নীতির বার্ষিক পর্যালোচনার সময় ট্রাম্প (Donald Trump) জানিয়েছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তাঁর দাবি ছিল, কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের ফলে সে দেশের শ্বেতাঙ্গরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সেই সূত্রে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকার ১৩৮ জন শ্বেতাঙ্গকে আমেরিকায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সমাজের একাংশ জানিয়েছে, শরণার্থী নির্বাচনে এ ধরনের বর্ণভিত্তিক নীতি আধুনিক মানবাধিকার মূল্যবোধের পরিপন্থী।
নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এশিয়া এবং আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত ও মানবিক সংকটে থাকা দেশগুলোর অশ্বেতাঙ্গ শরণার্থীদের জন্য আমেরিকার দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিরিয়া, সুদান, ইয়েমেন, আফগানিস্তানসহ বহু দেশের নিপীড়িত মানুষ দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন শরণার্থী নীতির উপর নির্ভরশীল ছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ট্রাম্পের (Donald Trump) সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংক্রান্ত নীতিমালার বিরোধী এবং বিশ্বব্যাপী মানবিক সঙ্কট আরও গভীর করতে পারে। তাঁরা আরও বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষা ও শরণার্থী সহায়তায় পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করা আমেরিকার ভাবমূর্তি এই সিদ্ধান্তে ক্ষুণ্ণ হবে।

আরও পড়ুন:বাণিজ্য উত্তেজনায় বিরতি? চিন–আমেরিকা রুদ্ধদ্বার আলোচনায় বড় সিদ্ধান্ত
ট্রাম্প (Donald Trump) প্রশাসনের দাবি, দেশের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতি এবং নাগরিকদের সুযোগ রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ একান্ত প্রয়োজনীয়। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, শরণার্থী নীতি মানবিকতার প্রশ্ন, এবং অর্থনৈতিক বা নিরাপত্তা অজুহাতে নির্যাতিত মানুষদের হতাশ করা আন্তর্জাতিক দায়িত্ব এড়ানোর সমান। পরিস্থিতির উত্তাপ বাড়ছে, এবং আগামী দিনে এই নীতি নিয়ে আইনি লড়াইও শুরু হতে পারে বলে মনে করছে ওয়াশিংটন পর্যবেক্ষকরা।













