বাংলাহান্ট ডেস্ক: আমেরিকায় বিদেশি কর্মীদের নিয়োগে এবার কড়াকড়ি আনতে উদ্যোগী হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, এইচ-১বি ভিসার জন্য কোম্পানিগুলিকে এখন থেকে বছরে অতিরিক্ত এক লক্ষ মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা) ফি দিতে হবে। এতদিন যে ফি ছিল তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম, তার সঙ্গে এই নতুন ফি যোগ হওয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগে কোম্পানিগুলির খরচ বিপুল পরিমাণে বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর সরাসরি প্রভাব পড়বে ভারতীয় কর্মীদের উপর, কারণ এই ভিসার সবচেয়ে বড় অংশীদার ভারতীয়রাই।
ভিসা নিয়ে ট্রাম্পের নতুন করে কড়াকড়ি (Donald Trump)
বর্তমানে এইচ-১বি ভিসার জন্য লটারিতে রেজিস্ট্রেশন করতে ২১৫ মার্কিন ডলার দিতে হয়। এছাড়া আই-১২৯ ফর্মের জন্য আরও ৭৮০ ডলার খরচ করতে হয় কোম্পানিগুলিকে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী এই বিদ্যমান ফি-র সঙ্গে এক লক্ষ ডলার যোগ হবে। ফলে কোনও কোম্পানি যদি একজন বিদেশি কর্মীকে এই ভিসায় আমেরিকায় নিয়ে আসতে চায়, তবে অতিরিক্ত বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করতে হবে। ট্রাম্প (Donald Trump) প্রশাসনের দাবি, এই পদক্ষেপের ফলে আমেরিকান কর্মীদের চাকরির সুযোগ বাড়বে, কারণ কোম্পানিগুলি বিদেশি কর্মী নিয়োগে আর সহজে ঝুঁকবে না। কেবলমাত্র সেই সব ক্ষেত্রেই বিদেশি কর্মী নিয়োগ করা হবে, যেখানে প্রমাণিতভাবে স্থানীয় আমেরিকান কর্মীরা কাজ করতে পারবেন না।
আরও পড়ুন:পিন ফাঁসের নতুন ফাঁদ! এটিএমে আঙুলের ছাপ স্ক্যান করে খালি হচ্ছে অ্যাকাউন্ট
এইচ-১বি ভিসা মূলত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সঙ্গে যুক্ত। বিদেশি কর্মীদের মধ্যে যারা এই ভিসায় আমেরিকায় যান, তাঁদের বেতন গড়ে বছরে প্রায় ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। এখন থেকে ট্রাম্পের (Donald Trump) করা নতুন নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানিগুলিকে সেই বেতনের বাইরে সরকারের কাছেও দিতে হবে এক লক্ষ ডলার। ফলে খরচের চাপ একদিকে যেমন বাড়বে, তেমনি নিয়োগের সংখ্যাও কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত বছর এই ভিসার সুবিধাভোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন ভারতীয়রা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক বছরেই মোট ভিসাপ্রাপ্তদের ৭১ শতাংশ ছিলেন ভারতীয় কর্মী। দ্বিতীয় স্থানে ছিল চিন, যাদের শেয়ার ছিল ১১ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে ফি এক ধাক্কায় এতটা বাড়ায় ভারত-সহ অন্যান্য দেশ থেকে আমেরিকায় কর্মী পাঠানো নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প (Donald Trump) বলেন, “আমাদের কোম্পানিগুলির কর্মী দরকার। এই সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করবে যে, আমেরিকা এবার সত্যিকারের দক্ষ কর্মী পাবে।” তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে, এই পদক্ষেপ শিল্প মহলের বিরোধিতার সম্মুখীন হবে না। তবে অ্যামাজন, অ্যাপেল, গুগল ও মেটার মতো বড় সংস্থাগুলি এই বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। একইভাবে মাইক্রোসফটও নীরব রয়েছে। অন্যদিকে আমেরিকার বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আপনি যদি কাউকে প্রশিক্ষণ দিতে চান, তবে আমেরিকানদের দিন। আর আপনি যদি দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার আনতে চান, তাহলে এইচ-১বি ভিসার জন্য বছরে এক লক্ষ ডলার দিন।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প নিজেও একসময় এইচ-১বি ভিসা নিয়েই আমেরিকায় এসেছিলেন। ১৯৯৬ সালে স্লোভেনিয়া থেকে মডেল হিসেবে কাজের জন্য তিনি এই ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখেন। ফলে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকেই বলছেন, তিনি এমন একটি নিয়ম কঠোর করছেন, যার সুবিধাভোগী একসময় তাঁর স্ত্রীও ছিলেন। তবুও ট্রাম্প (Donald Trump) প্রশাসন এই পদক্ষেপকে আমেরিকান কর্মসংস্থানের পক্ষে সঠিক দিশা হিসেবেই ব্যাখ্যা করছে।