বাংলাহান্ট ডেস্ক: নোবেল শান্তি পুরস্কার না পেলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে ‘শান্তির দূত’ হিসেবেই স্বীকৃতি পেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসির কেনেডি সেন্টারে চলছিল ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠান। ঠিক সেই মঞ্চেই ফিফা ঘোষণা করে তাদের নবপ্রবর্তিত সম্মান— ‘ফিফা পিস প্রাইজ’। এবং সেই পুরস্কারের প্রথম প্রাপক হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয় ট্রাম্পের। নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে খবরটি প্রকাশ্যে আসে। ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ট্রাম্পের। ২০২৬ বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক হিসেবে আমেরিকাকে বেছে নেওয়ার পর সেই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রথম ফিফা শান্তি পুরস্কার পেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump):
ফিফার রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার নিয়ম নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ ইনফান্তিনো একাধিকবার ট্রাম্প (Donald Trump) প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন প্রকাশ্যে। ফিফার প্রাক্তন গর্ভন্যান্স প্রধান মিগুয়েল মাদুরো এটিকে ‘রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা’ নীতির পরিপন্থী বলেও মন্তব্য করেছেন। তবে ফিফার যুক্তি, ২০২৬ বিশ্বকাপের ১০৪টি ম্যাচের অধিকাংশই অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রে। তাই নিরাপত্তা, পরিকাঠামো, পরিবহন এবং সব রকম প্রশাসনিক সহযোগিতার জন্য আমেরিকার সরকারকে পাশে পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই পরিস্থিতিতেই তৈরি হয়েছে ‘ফুটবল ইউনাইটস দ্য ওয়ার্ল্ড—ফিফা পিস প্রাইজ’, যা দেওয়া হবে বৈশ্বিক শান্তি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের। কেন ট্রাম্পকে এই পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা অনুষ্ঠানেই দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ফিফা।
আরও পড়ুন: শিলান্যাস শুরুর আগেই মমতার কড়া মন্তব্য, কী ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রী-র?
এই পুরস্কার ঘোষণার পাশাপাশি আরও বিতর্ক ঘিরে ধরেছে অনুষ্ঠানটিকে। এর আগে কেনেডি সেন্টারের বোর্ড ভেঙে নিজের ঘনিষ্ঠদের বসানোর অভিযোগ উঠেছিল ট্রাম্পের (Donald Trump) বিরুদ্ধে। ডেমোক্র্যাটদের দাবি, প্রশাসন নাকি ফিফাকে অতিরিক্ত সুবিধা দিয়েছে। যদিও কেনেডি সেন্টারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফিফা ৫ মিলিয়ন ডলার স্পনসরশিপ দিচ্ছে এবং আরও ২.৪ মিলিয়ন ডলার আলাদা অনুদান হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। একই সময়ে বিশ্বকাপ আয়োজক ১১টি শহরের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা রিপোর্ট চেয়েছে হোয়াইট হাউস। প্রতিটি শহরের জন্য আলাদা টাস্ক ফোর্সও তৈরি করা হয়েছে। বহুবার ট্রাম্প দাবি করেছেন যে ‘অসুরক্ষিত’ ডেমোক্র্যাট-শাসিত শহরগুলিতে ম্যাচ স্থানান্তরিত হতে পারে, যদিও ফিফা জানাচ্ছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মার্কিন প্রশাসনই।
ট্রাম্পের (Donald Trump) পুরস্কার পাওয়া ঘিরেও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তর্ক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বহুবার দাবি করেছেন যে তিনি ‘আটটি যুদ্ধ বন্ধ করেছেন’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও থামাতে পারবেন। ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ নিয়েও তিনি আগেই দাবি করেছিলেন যে বিরতি আনার কৃতিত্ব তাঁরই। এমনকি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সলমনের সামনে ওভাল অফিসে বসেই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ভারত-পাক যুদ্ধবিরতির পিছনে তাঁর ভূমিকা রয়েছে। যদিও নয়াদিল্লি একাধিকবার স্পষ্ট জানিয়েছে, এই সংঘর্ষবিরতি ছিল সম্পূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সিদ্ধান্ত। তৃতীয় পক্ষের কোনও ভূমিকা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোনে ট্রাম্পের দাবি জানানো হলেও তিনি সরাসরি তা নস্যাৎ করেন।

আরও পড়ুন: আবহাওয়া পরিবর্তনে ঠান্ডার মোকাবিলা করতে মাত্র ১৫ মিনিটে বানান ঝটপট হেলদি স্যুপ, প্রণালী রইল
তবুও থামার লক্ষণ নেই ট্রাম্পের (Donald Trump)। ফিফার শান্তি সম্মান পাওয়ার পরও ফের তিনি জোর দিয়ে দাবি করেন— “আমরাই ভারত-পাক যুদ্ধ থামিয়েছি।” আন্তর্জাতিক ফুটবল মঞ্চে ‘শান্তির বার্তা’ ছড়াতে চাইলেও, নতুন পুরস্কারের প্রথম প্রাপককে ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। ফুটবলের শান্তি সম্মানে নাম জুড়লেও, ট্রাম্পের দাবিগুলি নিয়ে আগের মতোই প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে ভারত ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে।












