বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সোনাগাছি (Sonagachi), নাম শুনলেই অনেকের চোখে মুখে ভেসে ওঠে ঘৃণার ছায়া। সমাজচ্যুত এই এলাকাতেই এখন প্রতিবছর গমগম করে দুর্গোৎসবের আলোর রোশনায়। যৌনকর্মীদের উদ্যোগে শুরু হওয়া পুজো এ বছর পা দিল ত্রয়োদশ বর্ষে। শুধু দেবীর আরাধনাই নয়, এই উৎসব সোনাগাছিতে এখন অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
২০১৭ সালে সোনাগাছি (Sonagachi) আইনিভাবে দুর্গাপূজো করার অনুমতি পায়
বছরের পর বছর দুর্গাপুজোর আলো থেকে দূরে ছিলেন সোনাগাছির (Sonagachi) মেয়েরা। দেবীপক্ষে নারীশক্তির পূজা হলেও যৌনকর্মীদের প্রবেশে আপত্তি ছিল সমাজের। প্রশ্ন উঠেছিল পতিতারা কি মা দুর্গার আরাধনা করবে? তবুও হার মানেননি তাঁরা। হাই কোর্টে লড়াই করে ২০১৭ সালে পান আইনি অনুমতি। সেখান থেকেই শুরু নতুন পথচলা।
২০১৩ সালে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে প্রথম শুরু হয় সোনাগাছির (Sonagachi) দুর্গোৎসব। শুরুতে চ্যালেঞ্জ ছিল প্রবল, তবে তিন বছর ধরে চোখরাঙানি, প্রশ্নবাণ, সামাজিক বঞ্চনার মধ্যেও পুজো চালিয়ে গেছেন তাঁরা। ধীরে ধীরে পাশে দাঁড়ান শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, সামাজিক সংগঠন, এমনকি এলাকার মানুষও। আজ এই পুজো শুধুই ধর্মীয় আচার নয়, বরং সামাজিক মর্যাদা আদায়ের আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনেই হয় পুজোর সব নিয়মকানুন পালন হয় সোনাগাছিতে (Sonagachi)। চতুর্থীতে বোধন, সপ্তমীতে কলাবউ স্নান, অষ্টমীর সকালে অঞ্জলি, সন্ধিপুজো ও ভোগ রান্না, সবই করেন যৌনকর্মীরা নিজের হাতে। নবমী শেষে দশমীর বিকেলে বেরোয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। ঢাকের বাজনা, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনির সঙ্গে মেতে ওঠেন সকলে। প্রতিমার সামনে ভেঙে যায় সমাজের ভেদাভেদ।
আরও পড়ুনঃ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে নবম-দশম শ্রেণীর পরীক্ষা, আগামী রবিবারের পরীক্ষা নিয়েও আশাবাদী ব্রাত্য বসু
ত্রয়োদশ বর্ষের এই দুর্গোৎসব শুধু দেবীর আরাধনা নয়, সমাজের মূলধারায় জায়গা করে নেওয়ার জয়গাথা। এক সময় যাঁদের ‘অস্পৃশ্য’ বলা হত, আজ তাঁদের পুজোই হয়ে উঠেছে আত্মসম্মানের প্রতীক। সোনাগাছির (Sonagachi) দুর্গোৎসব এখন কেবল একটি রেড-লাইট এলাকার পুজো নয়, বরং লড়াইয়ের প্রতীক, অধিকার প্রতিষ্ঠার আলোকস্তম্ভ।