সুদূর লন্ডনে উমার আরাধনা! দুর্গোৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা প্রবাসীরাও, ২০ বছরে পদার্পণ পঞ্চমুখীর পুজোর

Published on:

Published on:

Durga Puja 2025 to be celebrated with grandeur in London.

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ২০০৬ সালের এক শরতের দুপুর! লন্ডনের হ্যারোর এক নিঃশব্দ ঘরে এক মহতী স্বপ্ন নিয়ে একত্র হয়েছিলেন কিছু বাঙালি। সবার চোখে ছিল একটাই স্বপ্ন; দেশ থেকে দূরে থেকেও যেন ভারতীয় সংস্কৃতির আলো নিভে না যায়। এর পাশাপাশি, নতুন প্রজন্ম যেন ‘আপন ঘর’-এর স্পর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়। সেই স্বপ্ন থেকেই জন্ম নিল পঞ্চমুখী। নামের ভেতরেই ছিল বহুমুখী চিন্তার প্রতিফলন। ঐতিহ্যের শিকড়ে দাঁড়িয়ে আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছিল এগিয়ে চলার প্রতিশ্রুতি। কঞ্চ-ঢাকের বাজনা আর ধূপ-ধুনোর গন্ধে যে পথচলা শুরু হয়েছিল ছোট্ট পরিসরে, দুই দশক পেরিয়ে আজ তা পরিণত হয়েছে মহীরুহে (Durga Puja 2025)। যেটি লন্ডনের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

দুর্গোৎসবের (Durga Puja 2025) আনন্দে মাতোয়ারা প্রবাসীরাও:

হ্যারো থেকে এই সফর শুরু হলেও বর্তমানে পঞ্চমুখীর সুর ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র ব্রিটেন জুড়ে। লন্ডনের বহুজাতিক আবহে এটি হয়ে উঠেছে ভারতীয় রঙের এক অনন্য ক্যানভাস। এই বছর ২০ বছরে পা দিয়ে হ্যাচ এন্ড হলে পুজোর (Durga Puja 2025) আয়োজন যেন সেই যাত্রার আরেকটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভারতীয়দের পাশাপাশি অ-ভারতীয়, প্রত্যেকের জন্যই এই উৎসবের দরজা খোলা রয়েছে। যেখানে উপস্থিত হলে কেউ খুঁজে পান নস্টালজিয়ার উষ্ণতা, কেউ পান এক টুকরো ঘরের ছোঁয়া।

Durga Puja 2025 to be celebrated with grandeur in London.

নিঃসন্দেহে দুর্গোৎসবই (Durga Puja 2025) পঞ্চমুখীর প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। পুজোর দিনগুলিতে মন্ত্রোচ্চারণ, ঢাকের তালে মেতে ওঠেন সবাই। পুরোহিতের কণ্ঠে শ্লোকধ্বনি যেন গঙ্গার ঘাটের আবহ ফিরিয়ে আনে। সকলে মিলে অঞ্জলি দেওয়ার পাশপাশি ছোটরা নৃত্য-গীতের মহড়ায় মেতে ওঠে। মায়েরা ব্যস্ত থাকেন ভোগ রান্নায়। আর প্রবীণদের চোখ টলমল করে ওঠে দেবীর আগমনে। এই পুজো আসলে ধর্মীয় আচার ছাড়িয়ে হয়ে ওঠে পরিচয় আর আবেগের পুনর্জন্ম। যেখানে প্রত্যেকেই যেন খুঁজে পান নিজেদের শিকড়। আর এইভাবেই দেশের মাটি থেকে এত দূরে থেকেও প্রত্যেকের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় পূর্ণতা পায় এই আয়োজন।

Durga Puja 2025 to be celebrated with grandeur in London.

তবে, শুধু পুজো নয়, বছর বছর নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এটাও প্রমাণ করেছে পঞ্চমুখী ঐতিহ্যের ধারক এবং বাহক। এখানে ঐতিহ্য মানে কেবল স্মৃতিচারণ নয়, বরং পরিলক্ষিত হয় ঐতিহ্যের প্রবাহমান স্রোত। যা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে বহমান। বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলন তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। ভারতের খ্যাতনামা শিল্পী থেকে শুরু করে ব্রিটিশ-ভারতীয় তরুণ প্রতিভা সবাই একই মঞ্চে একত্র হন। গান-নাচ-নাটকে মিলেমিশে যায় সমস্ত ভৌগোলিক সীমারেখা। রয়ে যায় শুধু বাঙালিয়ানা আর ভারতীয়দের সম্মিলিত স্পন্দন।

Durga Puja 2025 to be celebrated with grandeur in London.

জানিয়ে রাখি যে, পঞ্চমুখীর দুই দশকের ইতিহাসে আরেকটি উজ্জ্বল অধ্যায় হল সমাজসেবা। দুস্থদের সাহায্য ছাড়াও প্রান্তিকদের পাশে দাঁড়ানো কিংবা চ্যারিটির মাধ্যমে বারংবার প্রমাণিত হয়েছে প্রকৃত পুজো (Durga Puja 2025) শুধু দেবীর নয়, মানুষের সেবাতেও নিহিত। পুজো মণ্ডপ থেকে সংগৃহীত অনুদান প্রায়ই পৌঁছে গেছে ব্রিটেন ও ভারতের নানা চ্যারিটি সংগঠনের হাতে।

Durga Puja 2025 to be celebrated with grandeur in London.

এছাড়াও, পঞ্চমুখীর সবচেয়ে বড় শক্তি অবশ্যই তাদের একনিষ্ঠ সমর্থকরা। যাঁরা প্রথম দিন থেকে আজও পাশে আছেন। সময়, শ্রম, আর ভালোবাসা দিয়ে তাঁরা গড়ে তুলেছেন এই প্রতিষ্ঠানকে। পঞ্চমুখী কর্পোরেট জগতকেও যুক্ত করেছে কমিউনিটি উদ্যোগে। কিন্তু, কখনও মাটির গন্ধ হারাতে দেয়নি। বরং প্রতিটি উদ্যোগে শিকড়ের টান আরও স্পষ্ট হয়েছে।

আরও পড়ুন: ভারতের এই শহরে আয়োজিত হবে ২০৩০ সালের কমনওয়েলথ গেমস? দেওয়া হল প্রস্তাব

আজ, যখন পঞ্চমুখী তার সফরের ২০ বছর পূর্ণ করেছে তখন এটি আর কেবল একটি সংগঠন নয়, বরং এটি এক অনুভূতি হয়ে উঠেছে। পঞ্চমুখী এমন এক পতাকা, যেখানে ভারতের বন্ধন ও সম্প্রীতি মিলেমিশে উড়ে বেড়ায়। শঙ্খের ধ্বনি, ঢাকের গর্জন (Durga Puja 2025) আর হাসির কোলাহল ভেসে যায় লন্ডনের বাতাসে। তা যেন বলে শিকড় থেকে উঠে আসা ঐতিহ্য দূর দেশে গিয়েও ম্লান হয় না, বরং নতুন আলোয় আরও উজ্জ্বল হয়। আর এইভাবেই দুই দশকের এই পদযাত্রা কেবল ইতিহাস নয়, ভবিষ্যতের দিকেও আলো জ্বালিয়ে দেয়। যেখানে শিকড়, সাধনা আর সম্প্রীতি একসঙ্গে পথ দেখায় আগামী প্রজন্মকে।