গ্যাসের দাম ১০ হাজার, বেতন পাচ্ছেন না সরকারি কর্মীরা! শ্রীলঙ্কার মতোই অবস্থা পাকিস্তানের

Published On:

বাংলা হান্ট ডেস্ক : রাজনৈতিক সংঘাত, হত্যা, অর্থনৈতিক সংকট—পাকিস্তান মূলত এসব কারণেই সংবাদের শিরোনামে আসে। দীর্ঘদিন ছিল সামরিক শাসনের অধীনে। এখন সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় না থাকলেও পেছন থেকে ক্ষমতার কলকাঠি নাড়ে। আর এ সবকিছুর ফলেই গভীর অর্থনৈতিক সংকট। জানা যাচ্ছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৫৮০ কোটি ডলার-আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই রিজার্ভ দিয়ে এক মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে, ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের (Pakistan) মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে সব মিলিয়ে পাকিস্তান আইএমএফের সব শর্ত মেনে নেবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে আবার।

পাকিস্তানের পরিসংখ্যান ব্যুরো (পিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। দেখা গেছে, আবাসন, পরিষেবা ও যোগাযোগ ছাড়া অন্য সব খাতে মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের ঘরে উঠেছে। মূল্যস্ফীতির হার সবচেয়ে বেশি খাদ্যপণ্য ও পরিবহন খাতে। ডিসেম্বর মাসে এই দুটি খাতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল যথাক্রমে ৫৫ দশমিক ৯৩ ও ৪১ দশমিক ১৬ শতাংশ।

pakistan electricity save

পাকিস্তানের রিজার্ভ এখন মাত্র ৫৮০ কোটি ডলার। আগামী তিন মাসে পাকিস্তানকে মোট ৮০০ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে আবার চলতি মাসেই দুটি বিদেশি ব্যাংকের ১০০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ফলে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছেন পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকেরা। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বরাবরই আইএমএফের ঋণ নেওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি আইএমএফের শর্ত মেনে ভর্তুকি কমাতে চাননি। তিনি ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশটির নতুন সরকার আইএমএফের শর্ত মেনে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করে এবং শেষমেশ আইএমএফের ঋণ পায় ১১০ কোটি ডলার।

এর আগে সম্প্রতি জ্বালানি সংকটে পাকিস্তানের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেক পণ্যবাহী ট্রেন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি রেল। করাচি ও লাহোরে বেশ কয়েকটি মালগাড়ি দাঁড়ি থাকে বহুদিন। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে দেশের অর্থনীতির আজ এই হাল বলে মত বিশ্লেষকদের। এরই মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বন্যায় ভুগেছে পাকিস্তান। যাতে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে সেই দেশে। ঘরোয়া উৎপাদনের ৫.৩ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে সেই দেশে। রান্নার গ্যাস ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকটে ভুগছে সেদেশের নাগরিকরা। এই আবহে আইএমএফ সহ বহু আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং দেশ পাকিস্তানকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে। তবে আইএমএফ এক শর্তে সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছে। ১.২ বিলিয়ন ডলার পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়ে আইএমএফ জানিয়েছে, অর্থ মন্ত্রক এবং ফেডারেল বোর্ড অফ রিজার্ভের কাজে খুশি নয় তারা। এখনও পর্যন্ত পাকিস্তান মোট ৭ বিলিয়ন ডলা ঋণ নিয়েছে আইএমএফ থেকে। জ্বালানি ও অর্থ সংকটে ভুগতে থাকা পাকিস্তান ঋণের বোঝাতেও ঝুঁকে পড়েছে।

 

পাকিস্তানের মন্ত্রী খারাজ আসিফ জানান, মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। তিনি পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, সামগ্রিক জীবনধারা এবং অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারলে প্রায় ২৬ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৬০ বিলিয়ন পাকিস্তানের মুদ্রা সঞ্চয় করা যাবে। জীবনধারায় পরিবর্তনের লক্ষ্যে সে দেশে জুলাইয়ের মধ্যে বৈদ্যুতিক পাখার উৎপাদন বন্ধ করার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন, সেখানকার খারাপ ফ্যানে ১২০-১৩০ ওয়াট করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সারা বিশ্বে এমন ফ্যান পাওয়া যায়, যা চালাতে ৬০-৮০ ওয়াট করে বিদ্যুতের ব্যবহার করতে হয়।

X