বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যের রেশন দুর্নীতি (Ration Scam) মামলায় একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আনছে ইডি (Enforcement Directorate)। সময় যত গড়াচ্ছে লাফিয়ে বাড়ছে দুর্নীতির টাকার অঙ্কের হিসাব। যা দেখে বিস্মিত খোদ গোয়েন্দা আধিকারিকরাও। গত বছরের শেষ থেকে রেশন মামলার তদন্তে নেমেছে ইডি। রেশন দুর্নীতিতে প্রথমে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্ৰিয় মল্লিককে (Jyotipriya Mallick) গ্রেফতার করে ইডি। আর তারপর জ্যোতিপ্ৰিয় ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা তথা উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যর গ্রেফতারি। তবে এখনও পাওয়া যায়নি তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের খোঁজ।
সন্দেশাখালির (Sandeshkhali) ঘটনার পর দু’দুবার তলব এড়িয়ে গেছেন শেখ শাহজাহান (Shahjahan Sheikh)। প্রথমবার বাড়ির দেওয়ালে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়ে এসেছিলেন ইডি আধিকারিকরা। দ্বিতীয়বার শাহজাহান শেখের মেইল আইডিতে পর্যন্ত নোটিশ পাঠানো হয়। তবে এখনও ধরা দেয়নি তৃণমূল নেতা ‘বাদশা’ শাহজাহান। তাই এবার শেখ শাহজাহানের বিষয়ে আরও তথ্য জোগাড় করতে ময়দানে নামছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
ওদিকে রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্য ও জ্যোতিপ্ৰিয় মল্লিককে জেরা করে দুর্নীতির রহস্যভেদ করতে চাইছেন গোয়েন্দারা। বুধবার ফের প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে জ্যোতিপ্ৰিয়কে জেরা করেন তদন্তকারী অফিসাররা। ইডি সূত্রে খবর, এদিন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রাক্তন মন্ত্রীকে জেরা করা হয়েছে। শঙ্কর আঢ্যকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই জ্যোতিপ্ৰিয় মল্লিককে একাধিক বিষয়ে জেরা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় শাহজাহান প্রসঙ্গেও।
রেশন কেলেঙ্কারিতে শাহজাহান শেখের ভূমিকা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, রেশন দুর্নীতি ও শেখ শাহজাহানের কী সম্পর্ক ছিল, ঠিক কিভাবে উনি রেশন দুর্নীতির যুক্ত ছিলেন এই সমস্ত বিষয়েই রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্ৰিয় ওরফে বালুকে টানা জেরা করা হয়। এদিকে ৫ জানুয়ারি গ্রেফতারির পর থেকে শঙ্করের বিষয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ইডির হাতে এসেছে।
ইডি আগেই জানিয়েছে , তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত শঙ্কর আঢ্যর নামে ৯০টি বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থার সন্ধান মিলেছে। এই সংস্থা গুলির মাধ্যমে রেশন দুর্নীতির বিপুল পরিমাণ কালো টাকা সাদা করা হয়েছে বলে আশঙ্কা ইডির। আদালতে ইডি জানিয়েছে, শঙ্করের সংস্থার মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে লেনদেন করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্তত ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের।
তদন্তকারী সংস্থার দাবি করেছিল, জেলবন্দি শঙ্করের মাত্র একটি সংস্থারই দশ বছরের ‘টার্নওভার’ এক হাজার কোটি টাকা। এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হয়েছে। এছাড়া শঙ্কর ও তার পরিবারের থাকা থাকা ১১টি ফোরেক্স সংস্থার মাধ্যমে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হয়েছে বলে তদন্তকারীরা দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন: আজই আসতে পারে সুখবর! বাজেটে কতটা DA বৃদ্ধি করতে পারে মমতা সরকার? জল্পনা তুঙ্গে
আবার হেফাজতে থাকাকালীন ইডির বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন শঙ্কর আঢ্য। তাকে দিয়ে জোর করে কথা বলানো হচ্ছে, এই মর্মে কলকাতার নগর দায়রা আদালতের বিচারকের কাছে তিনি চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে শঙ্কর ছাড়া আর কার মাধ্যমে বিদেশে দুর্নীতির কালো টাকা পাচার করা হয়েছে সেই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে চাইছে ইডি।
ওদিকে ইডির ডাকে সাড়া না দিলেও আগামী জামিনের আর্জি জানিয়েছেন এশেখ শাহজাহান। আগামী ১২ তারিখ তার আগাম জামিনের মামলার শুনানি রয়েছে। হাতে স্বল্প সময়। এর মধ্যেই শেখ শাহাজাহানের বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জোগাড় করতে চাইছে ইডি।