রুশ তেল ইস্যুতে চরমে মাস্ক-ট্রাম্প দ্বৈরথ, ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে ‘ইঙ্গিতবহ’ মন্তব্য এক্স-কর্তার?

Published on:

Published on:

বাংলাহান্ট ডেস্ক:  ভারতের পাশে দাঁড়াল ইলন মাস্কের (Elon Musk) সংস্থা এক্স। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা পিটার নাভারোর (Peter Navarro) তীব্র সমালোচনার মুখে ভারতের হয়ে সোচ্চার হয়েছে এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। যদিও মাস্ক নিজে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি, তবে এক্স-এর তরফে করা প্রতিক্রিয়া কার্যত তাঁর অবস্থানকেই প্রকাশ করছে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। আর এই প্রতিক্রিয়াতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন নাভারো। শুরু হয় খোলামেলা বাকযুদ্ধ।

 মাস্ক ও ট্রাম্পের দ্বৈরথ (Elon Musk)

সম্প্রতি আমেরিকা (America) ভারতের উপরে শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করেছে। রাশিয়ার (Russia) কাছ থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের (India) পণ্যের উপর এখন মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। এতে দুই দেশের বাণিজ্য কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। মার্কিন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে আরও জোরদার করতে নাভারো এক্স হ্যান্ডেলে (Elon Musk) একাধিক পোস্টে ভারতের কড়া সমালোচনা করেন। তাঁর দাবি, ভারত কেবল নিজের মুনাফার জন্যই রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে এবং এই সিদ্ধান্তে সরাসরি ইউক্রেন যুদ্ধকে সাহায্য করছে। এমনকি, ভারতের আরোপিত শুল্কের ফলে আমেরিকায় চাকরি হারাচ্ছেন বহু মানুষ—এমন অভিযোগও করেন তিনি।

আরো পড়ুন:- মার্কিন সেনা অভিযানে নির্দোষ কোরিয়ান নাগরিকদের মৃত্যু! ট্রাম্পের অস্বস্তি বাড়িয়ে ৬ বছর পর বিষ্ফোরক অভিযোগ

ঠিক এই পোস্টের নীচেই এক্স-এর (Elon Musk) পক্ষ থেকে একটি মন্তব্য দেখা যায়। সেখানে লেখা ছিল—“ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনার সিদ্ধান্ত মূলত জ্বালানি নিরাপত্তার কারণেই, কেবল লাভের জন্য নয়। এই সিদ্ধান্ত কোনও আন্তর্জাতিক আইন বা বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে না। ভারত শুল্ক নেয় ঠিকই, তবে পরিষেবা খাতে আমেরিকারও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। তাছাড়া, আমেরিকা নিজেও রাশিয়ার কাছ থেকে ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য জিনিস কেনে। এ ধরনের সমালোচনা আসলে ভণ্ডামি।”

এই বক্তব্য নাভারোকে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে। তিনি পাল্টা লেখেন, “বাহ্‌! মাস্ক (Elon Musk) আজকাল মানুষের পোস্টে ঢুকে নিজের বক্তব্য প্রচার করছেন! আমার পোস্টের নীচের ওই মন্তব্য জঘন্য। ভারত একমাত্র নিজের লাভের জন্যই রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের আগে তো ওরা এমনটা করত না। ভারত সরকারের মেরুদণ্ড নেই। তারা কেবল নিজের স্বার্থ দেখছে। এই সিদ্ধান্ত ইউক্রেনীয়দের হত্যা বাড়াচ্ছে এবং আমেরিকানদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে।”

কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনি এক্স (Elon Musk)। প্ল্যাটফর্মটির পক্ষ থেকে আবারও পাল্টা মন্তব্য আসে। সেখানে বলা হয়, “পিটারের দাবি ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়। ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনার সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ, সার্বভৌম এবং মূলত জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্যই। এতে কোনও আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ হচ্ছে না। আমেরিকা নিজেই কোটি কোটি ডলার দিয়ে রাশিয়ার ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য পণ্য কিনে থাকে। অথচ ভারতকে দোষারোপ করছে। এভাবেই মার্কিন দ্বিচারিতা প্রকাশ পাচ্ছে।”

Musk-Trump duel at its peak over Russian oil issue

আরও পড়ুন:- কর নীতিতে বৈষম্য! সিগারেটে বাড়লেও বিড়ির ক্ষেত্রে কমল শুল্ক, প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র

বিশ্লেষকদের মতে, এই উত্তরে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে এক্স (Elon Musk) ভারতের সার্বভৌম সিদ্ধান্তকে সম্মান করা উচিত এবং আমেরিকার দ্বিচারিতা সামনে আনা দরকার। বিশেষত যখন ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি দুই দেশের বাণিজ্যকে প্রভাবিত করছে, তখন ভারতের পক্ষে এমন সোচ্চার ভূমিকা কার্যত কূটনৈতিক তাৎপর্য বহন করছে।

উল্লেখ্য, ট্রাম্প এবং মাস্কের (Elon Musk) দ্বন্দ্ব নতুন নয়। প্রকাশ্যে তাঁরা একাধিকবার একে অপরকে আক্রমণ করেছেন। মাস্ক ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি একটি নতুন রাজনৈতিক দলও গঠন করেছেন। ফলে নাভারোর পোস্টে এক্স-এর জবাব কেবল ভারতের প্রতি সমর্থনই নয়, বরং ট্রাম্প শিবিরের সঙ্গে মাস্কের চলমান দ্বন্দ্বেরই প্রতিফলন। এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলে স্পষ্ট হয়েছে, ৫০ শতাংশ শুল্কের জেরে যখন ভারত-মার্কিন সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তখন ভারতের পাশে দাঁড়াতেই দ্বিধা করেনি ইলন মাস্কের সংস্থা।