বাংলা হান্ট ডেস্ক : চালকল মালিক বাকিবুর রহমান (Bakibur Rahaman) এবং রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (Jyotipriya Mallick) গ্রেফতারির পর থেকেই সরগরম হয়ে উঠছে রাজনৈতিক মহল। রেশন বণ্টন দুর্নীতির পরিমাণ ঠিক কত, কোথায় এর শেষ? তা নিয়ে চলেছে বিস্তর কাটাছেঁড়া। জেরা, জিজ্ঞাসাবাদ এবং তল্লাশি করে যে তথ্য ইডির ( Enforcement Directorate) হাতে উঠে এসেছে, তাতে তদন্তকারীদের অনুমান, প্রায় হাজার কোটি টাকা পার করে যাবে সেই অঙ্ক।
সম্প্রতি ইডি সূত্রে যে তথ্য সামনে এসেছে তা সত্যিই চমকে দেওয়ার মত। সংস্থাটি বলছে, রাজ্যের প্রায় ২১ হাজার ৩০০ রেশন দোকানের মধ্যে অধিকাংশের থেকেই মাসিক চার হাজার টাকা মাসোহারা তোলা হত। গত এক দশক ধরে চলে আসছে এই কাজ। কেবল এই টাকাই ৭০০ কোটির কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে খবর। পাশাপাশি তদন্তে নেমে প্রায় ৩০০-র বেশি এমন রেশন দোকানের হদিশ পাওয়া গেছে যার বাস্তবে কোনও অস্তিত্বই নেই। অর্থাৎ এই দোকানের নামে কেন্দ্র থেকে রেশন নিয়ে তা বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হত। এতে করেই প্রায় ১৫০ কোটির কাছাকাছি টাকা তোলা হয়েছে বলে দাবি।
এসব ছাড়াও যেসব রেশন দোকানের মালিক সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তারাও নানাভাবে কারচুপি করে খোলা বাজারে ন্যায্য মূল্যের সামগ্রী বিক্রি করেছে বলে খবর। এই বাবদ প্রায় ২০০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে বলে জানাচ্ছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। দুর্নীতিবাজরা তৈরি করেছে ভুয়ো চাষির অ্যাকাউন্ট। সেই খাতেও ৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি দুর্নীতি হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা। আর এই দুর্নীতি প্রায় এক দশক ধরে চলে আসছে বলে জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
আরও পড়ুন : মলয়ের মাথায় বাজ! বড় রায় দিল হাইকোর্ট, এবার কী কপাল পুড়তে চলেছে রাজ্যের আইনমন্ত্রীর?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিপুল অঙ্কের টাকা আছে কোথায়? তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, দুর্নীতির এই সমুদ্রের থেকে মাত্র এক আঁজলারই সন্ধান পেয়েছেন তারা। সেই অঙ্ক মেরেকেটে ৫০ কোটির কাছাকাছি। বাকি টাকার একটা বড় অংশ হয়ত এখন বিদেশে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যের অন্যান্য প্রভাবশালী নেতাদের ব্যাঙ্কেও ঢুকেছে এই টাকা। তদন্তকারী অফিসাররা জানাচ্ছেন, এই কালো টাকার অর্ধেকাংশ চলে যেত বাকিবুর এবং তার ঘনিষ্ঠদের কাছে। বাকি টাকা যেত উচ্চপদস্থ নেতা মন্ত্রীদের পকেটে।
আরও পড়ুন : ভোট হিংসায় নিহতদের নিকটাত্মীয়রা পাবে চাকরি! বড় সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে
যদিও সন্দেহভাজন ব্যক্তিত্বদের ঘর বাড়ি সার্চ করে সেরকম মোটা অঙ্কের টাকার খোঁজ পাননি ইডির কর্মকর্তারা। যার জেরে বিদেশযোগের ধারণা আরও বদ্ধমূল হচ্ছে। সূত্রের খবর, জ্যোতিপ্রিয়কে জেরার সময় ‘প্রভাবশালী’দের কাছে কীভাবে টাকা পৌঁছাতে তার কয়েকটি মাধ্যম এবং সূত্র উদ্ধার হয়েছে। এই বিষয়ে এক অফিসার জানিয়েছেন, “বাকিবুরের পরিবারের সদস্য ও মন্ত্রীর স্ত্রী ও মেয়েকে ডিরেক্টর করে তিনটি সংস্থা খোলা হয়েছিল। ওই সংস্থাগুলির মাধ্যমে প্রায় কুড়ি কোটি কালোটাকা সাদা করা হয়েছিল। পরে দেখা যায়, তার অর্ধেক, প্রায় ১০ কোটিটাকা মন্ত্রী ও তার মেয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’