বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের দেশে মহিলাদের অধিকার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের অংশগ্রহণের আলোচনার মাঝেই এবার এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল। সম্প্রতি সরকার দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, দেশের বিবাহিত মহিলারা চাকরি করে নিজেদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী মনে করলেও তাঁদের ইচ্ছে মতো অর্থ ব্যয় করতে পারেন না।
এই প্রসঙ্গে মানিকন্ট্রোলের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (NFHS) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখনও খুব কম মহিলা আছেন যাঁরা তাদের উপার্জিত অর্থ নিজেরাই খরচ করার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও, গত ১৫ বছরের তুলনায় খরচ সম্পর্কিত নির্ধারণের দিকে নারী ও পুরুষের উভয়েরই যোগদান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি ৬ জনের মধ্যে মাত্র একজন বিবাহিত মহিলা তাঁর উপার্জন নিজের ইচ্ছামতো ব্যয় করতে পারেন। আশ্চর্যের বিষয় হল, গত ১৫ বছরেও এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ, এখনও পরিবারে স্বামীর অধিকার আছে স্ত্রীর উপার্জন খরচ করার।
১৫ বছরের তুলনায় খারাপ পরিস্থিতি:
মূলত, ২০১৯ এবং ২০২১ সালের মধ্যে সম্পন্ন এই সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, শুধুমাত্র ১৮ শতাংশ বিবাহিত মহিলা তাঁদের উপার্জনের খরচ নির্ধারণ করেন। ২০০৫-২০০৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন সমীক্ষায় এই হার ছিল ২৪ শতাংশ। তবে, এই সময়ে স্বামীর সঙ্গে একত্রে খরচ নির্ধারণ করা নারীর সংখ্যা ০.১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মোট পরিসংখ্যান দাঁড়িয়েছে ৬৭ শতাংশে।
বিবাহিত মহিলাদের কর্মসংস্থান হ্রাস:
২০০৫-০৬ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী বিবাহিত মহিলাদের মধ্যে কর্মরত নারীর সংখ্যা ছিল ৪৩ শতাংশ, যা চলতি বছরের প্রকাশিত রিপোর্টে নেমে এসেছে ৩২ শতাংশে। তবে এটি আগের পরিসংখ্যানের চেয়ে ১ শতাংশ বেশি। সেক্ষেত্রে কর্মরত বিবাহিত নারীর সংখ্যা ছিল ৩১ শতাংশ। যদিও, শহর এবং গ্রামীণ উভয় ক্ষেত্রেই নিজস্ব উপার্জন খরচ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া মহিলাদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
পুরুষের উপার্জনে নারীর “অধিকার”:
ওই সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে, বেতনভোগী পুরুষদের উপার্জনে খরচ করার সিদ্ধান্তে স্ত্রীদের অংশগ্রহণ ক্রমাগত বাড়ছে। ১৫ বছর আগে হওয়া সমীক্ষায় যেখানে এই হার ছিল ৬২ শতাংশ, এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ শতাংশে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ১৫ বছর আগে যেখানে পুরুষের নিজের উপার্জনের খরচ করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার হার ছিল ২৫ শতাংশ, এখন তা নেমে এসেছে ২১ শতাংশে। তবে ৬ শতাংশ মহিলা এমনও আছেন যাঁরা তাঁদের স্বামীর উপার্জনের খরচের সব সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেন।
ঘরোয়া কেনাকাটায় মহিলাদের ভূমিকা বাড়ছে:
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ঘরোয়া কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে, মহিলাদের সিদ্ধান্তগুলি প্রাধান্য পায়। পাশাপাশি, এই ক্ষেত্রে, শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক পুরুষই একা সিদ্ধান্ত নেন। শুধু তাই নয়, স্বামী এবং স্ত্রীর যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিরিখে ১৫ বছর আগে পরিসংখ্যান ছিল ৪৪ শতাংশ। যদিও, এখন তা বেড়ে ৭২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সমীক্ষায় পুরুষদের মধ্যে মাত্র ১৮ শতাংশ বলেছেন যে, স্ত্রী’র নিজস্ব উপার্জনের খরচে তাঁদের পুরো সম্মতি আছে। যদিও, ১৫ বছর আগে এই হার ২০ শতাংশ ছিল।