বাংলা হান্ট ডেস্কঃ মেয়েকে অপহরণ করে পালিয়েছে বাবা। ছুটতে ছুটতে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ দিশেহারা মা। অভিযোগ, নিজের সন্তানকে কিডন্যাপ করে পালিয়ে গিয়েছেন স্বামী। যে কোনো সময় উনি বিদেশে চলে যেতে পারেন। পুলিশ চেষ্টা করেও স্বামীকে খুঁজে পাচ্ছে না। এরপরই হাইকোর্টে যান অসহায় মা। তার আর্জি, ‘যে কোনো ভাবে স্বামীকে আটকানো হোক। আদালত সন্তানকে ফিরিয়ে দিক।’
অ্যাকশনে হাইকোর্ট (Calcutta High Court)
এদিন হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চে মামলা যেতেই ‘পলাতক’ ব্যক্তিকে খুঁজতে দেশ জুড়ে তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হল। যাতে কোনোভাবেই ওই ব্যক্তি বিদেশে না যেতে পারেন সেই লক্ষ্যে দেশের বিমানবন্দরগুলিতে সতর্কতা জারি করতে হবে বলে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ হাইকোর্টের।
ইতিমধ্যেই ওই ‘পলাতক’ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে নিম্ন আদালত। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই ব্যক্তির খোঁজ শুরু করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহিলার নিখোঁজ সন্তানকে ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ যে কোনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারবে বলেও জানিয়েছে হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
মূল ঘটনা: হাইকোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে কলকাতার হাইল্যান্ড পার্কের বাসিন্দা অঙ্কন সরকারের সঙ্গে শ্রাবণী দত্তের বিয়ে হয়। তবে বিয়ের দশ বছর পরই সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় তারা আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের এক কন্যাসন্তান রয়েছে। পাঁচ বছরের মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে চেয়ে আদালতে মামলা করেন অঙ্কন সরকার। তবে নিম্ন আদালত জানিয়ে দেয়, নাবালিকা মায়ের সঙ্গেই থাকবে। তার বাবা ছুটির দিন তার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারবেন।
এরপর আদালতের নির্দেশ মেনে মায়ের কাছে থাকতে শুরু করে মেয়ে। তবে গত ১২মে এক রবিবার শপিং মলে যাওয়ার পথে গাড়িতে করে এসে মেয়েকে ছিনতাই করে নিয়ে যান স্বামী। এমনটাই অভিযোগ ওই মহিলার। তারপর থেকে তিনি আর মেয়ের কোনো খোঁজ পাননি বলেও জানান।
এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হন শ্রাবণী। ওই ঘটনায় নিম্ন আদালত শিশু-সহ বাবাকে হাজিরার নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। তারপরই অঙ্কনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে পুলিশও ওই ব্যক্তির খোঁজ দিতে ব্যর্থ। শেষমেশ মেয়েকে ফিরে পেতে হাই কোর্টে ‘হিবিয়াস কর্পাস’ মামলা করেন অসহায় মা।
পুলিশ জানায়, বর্তমানে রাজ্যের বাইরে আছেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। অনেক খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তর ভিসা রয়েছে। তাই বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন মামলাকারীর আইনজীবী। এরপরই অভিযুক্ত যাতে কোনোভাবেই দেশের বাইরে যেতে না পারে সেই নির্দেশ দেয় আদালত।
আরও পড়ুন: রেডি রাখুন ছাতা! দু’ঘণ্টায় ঝড়-বৃষ্টির তোলপাড় কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের এই ৫ জেলায়
আদালত জানতে পারে ওই ব্যক্তি নিউটাউনের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করেন। এরপরই সেই সংস্থার ডিরেক্টরকে সহযোগিতার নির্দেশ দেয় দুই বিচারপতির বেঞ্চ। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কাছ থেকে অভিযুক্তর মোবাইল নম্বর, ইমেল আইডি, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর-সহ সমস্ত তথ্য নিয়ে অবিলম্বে তার খোঁজ আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। আগামী ২৮ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন পুলিশকে রিপোর্ট জমা করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।