বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর নিয়ে রাজ্যে যখন চর্চা তুঙ্গে, ঠিক সেই সময় কলকাতার ভোটারদের জন্য বড় সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা। শুনানিতে গিয়ে যেন কোনও ভোটার সমস্যায় না পড়েন, সেই লক্ষ্যেই নিবাসী শংসাপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়ায় গতি আনার কথা ঘোষণা করলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)।
নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে বুথ লেভেল এজেন্টদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী
ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (SIR) দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এই প্রক্রিয়া নিয়ে সোমবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের বুথ লেভেল এজেন্টদের (BLA) সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে তিনি SIR নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করেন। পাশাপাশি দলের BLA, BLA-2 সহ গোটা দলকে SIR প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, SIR-এর প্রথম পর্যায়ে ৩১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৪২৪ জন ভোটার ম্যাপিংয়ের আওতায় আসেননি। স্বাভাবিক নিয়মে তাঁদের নির্বাচন কমিশনের শুনানির মুখে পড়তে হবে। আবেদনের ভিত্তিতে নথি ও তথ্য নিয়ে সেই শুনানিতে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে ওই ভোটারদের। নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট নির্দেশ দেন, শুনানির সময় যাতে কোনও ভোটার হয়রানির শিকার না হন, সেই দায়িত্ব দলের নেতাকর্মীদের নিতে হবে। প্রয়োজনীয় নথি জোগাড় করতেও উদ্যোগী হতে বলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই নিবাসী শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে গতি আনার কথা জানান মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)
মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পরই কলকাতা পুরসভায় মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) জানান, নিবাসী শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে এবার গতি আনা হবে। এতদিন শিক্ষা সংক্রান্ত নিবাসী শংসাপত্র কলকাতার টাউন হল থেকে দেওয়া হত। আর ঠিকানা সংক্রান্ত নিবাসী শংসাপত্র দিতেন কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলরেরা। কিন্তু SIR-এর ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কাউন্সিলরদের জারি করা নিবাসী শংসাপত্র গ্রহণ করছে না। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পুরসভা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে নিবাসী শংসাপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার থেকে নিবাসী শংসাপত্রের জন্য আবেদন করতে হবে সংশ্লিষ্ট বরো অফিসে। কলকাতা পুরসভার মোট ১৬টি বরো অফিসে আবেদন জমা পড়বে। সেখান থেকে আবেদন যাবে পুরসভার মূল দপ্তরে যাচাইয়ের জন্য। যাচাই শেষে সবুজ সঙ্কেত মিললেই আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট বরো অফিস থেকেই নিবাসী শংসাপত্র দেওয়া হবে।
তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, এই প্রক্রিয়ায় গতি এলে কলকাতায় ম্যাপিংয়ের সময় যাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, তাঁরা সহজেই নিজেদের নাম ফের তালিকায় তুলতে পারবেন। উল্লেখযোগ্য ভাবে, কলকাতার ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রেই সংশোধিত প্রথম খসড়া ভোটার তালিকায় সবচেয়ে বেশি ভোটার বাদ পড়েছেন।
পরিসংখ্যান বলছে, জোড়াসাঁকোয় ৭২,৮৯৯, চৌরঙ্গীতে ৭৪,৫১০, কলকাতা বন্দরে ৬৩,৭১৭, বালিগঞ্জে ৬৫,১৬৫, শ্যামপুকুরে ৪২,৩০৪, কাশীপুর-বেলগাছিয়ায় ৫৩,৩৬৫, বেলেঘাটায় ৫৬,৪৯৩, এন্টালিতে প্রায় ৪৯,০০০, রাসবিহারীতে ৪২,৫১৯, মানিকতলায় ৪১,৮৭০ এবং ভবানীপুরে ৪৪,৭৮৭ জন ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। মোট সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষের কাছাকাছি।

আরও পড়ুনঃ ‘ক্লাস ফোরের বিদ্যাও নেই’, ব্রিগেডে চিকেন প্যাটিস কাণ্ডে কাদের নিশানা করলেন অভিজিৎ?
তৃণমূল নেতৃত্বের ধারণা, কলকাতা পুরসভার এই নতুন উদ্যোগে BLA ও BLA-2-দের কাজ অনেকটাই সহজ হবে এবং বাদ যাওয়া ভোটারদের নাম ফের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে SIR পর্বে জন্ম-মৃত্যু শংসাপত্র দেওয়ার জন্য প্রায় ২০টি কাউন্টার খুলে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে বলে পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)।












