বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভগবান রাম (Lord Ram) যে শুধু ভারতেই পূজিত হন তা কিন্তু নয়। বরং, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁর মাহাত্ম্য বজায় রয়েছে। পাশাপাশি, জেনে অবাক হবেন যে, এমন একটি মুসলিম দেশও রয়েছে যেখানে রামের জীবন কাহিনি (Ramayana) নিয়ে ব্যালে বা নৃত্যনাট্যও পরিবেশিত হয়। মূলত, বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ার (Indonesia) জাভাতে রামায়ণ ব্যালে (নৃত্যনাট্য) বছরের পর বছর ধরে আয়োজন করা হচ্ছে। এই ব্যালেটি শ্রী রামের কাহিনির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি এটি ১৯৬১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই ব্যালে উপস্থাপনাকারী প্রত্যেক শিল্পীই হলেন মুসলিম। রামায়ণ ব্যালে সঙ্গীত, নৃত্য এবং নাটককে একত্র করে। যা সাধারণত সংলাপ ছাড়াই পরিবেশিত হয়।
এমতাবস্থায়, এই নৃত্যনাট্য পরিবেশনকারী স্থানীয় শিল্পীরা সকলেই মুসলমান হলেও তাঁরা সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে তাঁদের ভূমিকা পালন করেন। এমনকি, রমজানের সময়ে তাঁরা রোজা রাখেন এবং সন্ধ্যেতে ওই নৃত্যনাট্য উপস্থাপিত করেন। শিল্পী ট্রেসনো সুত্রিস্নো একবার নামাজ পড়ার পর কৃষ্ণের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা পেশাদার শিল্পী, আমরা হিন্দু বা মুসলিম শিল্পী নই।” একইভাবে, মহিলা নর্তকীরা তাঁদের মেক-আপ খুলে ফেলে আবার হিজাবও পরে ফেলেন। এমন দৃশ্য সেখানে অত্যন্ত সাধারণ।
উল্লেখ্য যে, ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ১০ শতকের এক হিন্দু মন্দিরে রামায়ণ ব্যালে পরিবেশিত হয়। বাল্মীকি রচিত রামায়ণ শৈল্পিক অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে রয়ে গেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে এই রেশ রয়েছে। যেগুলি ঐতিহাসিকভাবে ভারতের ধর্মীয় সভ্যতা দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিল। এশিয়ার দেশগুলিতে রামায়ণ ব্যালের ঐতিহ্য পরিলক্ষিত হয়।
আরও পড়ুন: Paytm-এর পর এবার “টার্গেট” BharatPe! পাঠানো হল নোটিশ, বন্ধ হবে আশনির গ্রোভারের UPI অ্যাপ?
ইন্দোনেশিয়ায় (জাভা এবং বালি) একে সেন্দ্রতারি রামায়ণ বলা হয়। থাইল্যান্ডে এটিকে রামাকিয়েন নৃত্য এবং কম্বোডিয়ায় এটিকে রেমকার নৃত্য বলা হয়। ইন্দোনেশিয়ায় পরিবেশিত রামায়ণ ব্যালেটি ২০১২ সালে গিনেস বুক দ্বারা বিশ্বের সবথেকে ধারাবাহিকভাবে মঞ্চস্থ ব্যালে হিসাবে মনোনীত হয়েছিল।
আরও পড়ুন: এবার চিন-পাকিস্তানকে ঠান্ডা করতে মিলল কড়া দাওয়াই! ভারত তৈরি করছে বিশেষ “গুপ্তচর বিমান”
জানিয়ে রাখি যে, জাভা দ্বীপপুঞ্জ ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম প্রধান দ্বীপ। এখানেই রয়েছে দেশের রাজধানী জাকার্তা। মাজাপাহিতের শক্তিশালী হিন্দু সাম্রাজ্য এখানে প্রায় ১৩০০ থেকে ১৫০০ শতাব্দীর মধ্যে বিকাশ লাভ করেছিল। যা সেখানকার সংস্কৃতি, ভাষা এবং পরিবেশে প্রভাব ফেলেছিল। পাশাপাশি, বিষ্ণু এবং শিবের মন্দিরগুলি দ্বীপ জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সেখানকার ভাষায় সংস্কৃত শব্দগুলিও পরিলক্ষিত হয়। মহাভারত ও রামায়ণের নামগুলি শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দোকানে দেখা যায়। তবে ইন্দোনেশিয়ায় হিন্দুদের জনসংখ্যা ২ শতাংশেরও কম।