বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারতের (India) ব্যাঙ্কিং খাতে এখন এক নতুন যুগের সূচনা ঘটেছে। বহু দশক ধরে বিদেশি প্রভাব থেকে নিজেদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুরক্ষিত রাখার পর, ভারত এখন আন্তর্জাতিক পুঁজির এক বিশাল ঢেউ আকর্ষণ করছে। সামগ্রিকভাবে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বা এফডিআই কিছুটা শিথিল হলেও, ভারতের ব্যাংক, বিমা সংস্থা এবং নন-ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানিগুলির (এনবিএফসি) প্রতি বৈশ্বিক আগ্রহ দ্রুত বাড়ছে। ব্লুমবার্গের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরেই প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, যা ভারতের আর্থিক সক্ষমতার প্রতি বিশ্বব্যাপী আস্থার এক নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ভারতের (India) ওপরেই আস্থা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের:
দুবাইয়ের এমিরেটস এনবিডি, জাপানের সুমিতোমো মিতসুই ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন, আমেরিকার ব্ল্যাকস্টোন এবং সুইজারল্যান্ডের জুরিখ ইনস্যুরেন্সের মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলি এখন ভারতীয় (India) বাজারে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্ল্যাকস্টোনের সম্প্রতি ফেডারেল ব্যাঙ্কে ৯.৯ শতাংশ শেয়ার কেনা—৭০৫ মিলিয়ন ডলারের এই চুক্তির মাধ্যমে তারা ব্যাঙ্কের সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার হয়ে উঠেছে। এই বিনিয়োগ শুধু স্বল্পমেয়াদি লাভের উদ্দেশ্যে নয়, বরং ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল ও ডিজিটালি সংযুক্ত অর্থনীতির প্রতি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলনও বটে।
আরও পড়ুন: জলের দরে হাই স্পিড ইন্টারনেট! সহজেই বাড়িতে মিলবে কানেকশন, এইভাবে বুকিং করুন BSNL ব্রডব্যান্ড
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা এখন এমন স্থিতিশীল বাজারের খোঁজ করছেন যেখানে ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি কম এবং আর্থিক সুরক্ষা বেশি। গ্রান্ট থর্নটনের পার্টনার বিবেক রামজি আয়্যর জানান, ভারতের (India) অভ্যন্তরীণ বাজারকেন্দ্রিক অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে সীমিত যোগসূত্র একে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
ভারতের (India) দ্রুত নগরায়ণ, বাড়তে থাকা ভোক্তা ব্যয় এবং প্রসারিত ডিজিটাল ইকোসিস্টেম দেশের আর্থিক খাতকে শক্ত ভিত দিচ্ছে। খুচরো ঋণ, গৃহঋণ এবং ছোট ব্যবসায়িক ঋণের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। তবে, এই অগ্রগতির মাঝেও ভারতের ব্যাঙ্কিং পরিষেবা এখনও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পুরোপুরি পৌঁছায়নি। দেশের একটি বড় অংশ এবং ক্ষুদ্র উদ্যোগ এখনও অনানুষ্ঠানিক ঋণ উৎসের উপর নির্ভরশীল। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে এই ‘আন্ডার-পেনেট্রেশন’ এক বিশাল সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করছে। বিদেশি সংস্থাগুলির জন্য প্রতিষ্ঠিত ব্যাঙ্ক ও এনবিএফসিগুলিতে অংশীদারিত্ব নেওয়া মানে একসঙ্গে গ্রাহকভিত্তি, নিয়ন্ত্রক অনুমোদন ও বিতরণ নেটওয়ার্কে সরাসরি প্রবেশাধিকার পাওয়া। এই পুঁজির আগমন ভারতের আর্থিক খাতে প্রতিযোগিতা, শাসনব্যবস্থা এবং উদ্ভাবনকে নতুন গতি দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: ছট পুজোর দিন বাড়ি থেকে ১,৭০০ কিমি দূরে বৈভব সূর্যবংশী! কোথায় রয়েছেন তারকা ব্যাটার?
এদিকে, বিদেশি মূলধনের এই প্রবাহ সরকারি খাতের ব্যাঙ্ক গুলোর দিকেও মোড় নিতে পারে। ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত (India) সরকার বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক গুলিতে বিদেশি বিনিয়োগের সীমা ২০ শতাংশ থেকে বাড়ানোর বিষয়ে ভাবছে, যাতে তারা সহজে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারে। যদিও সরকারের মালিকানার অংশীদারিত্ব ৫১ শতাংশের নিচে নামবে না, তবু বিদেশি অংশ বাড়িয়ে এই ব্যাঙ্ক গুলির জনমুখী চরিত্র বজায় রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে, ভারতের (India) ব্যাঙ্কিং খাতে বিদেশি পুঁজির এই স্রোত শুধু বিনিয়োগের গল্প নয়—এটি ভারতের অর্থনৈতিক শক্তি, স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যতের প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থার প্রতীক।













